• Uncategorized
  • 0

মুড়িমুড়কি -তে অনুরাধা কুন্ডা

পিৎজা পুরাণ 

সকালে উঠেই লেবু মধু জল। তারপর কড়কড় করে কাঁচা জিরে চিবিয়ে ওটস দিয়ে ব্রেকফাস্ট, ওটস দিয়ে লাঞ্চ। মাঝে চারখানা কাঠবাদাম। একটা ফ্যাট ফ্রি ফল। দেড়ঘন্টা “ইয়োগা”। একটু ইয়োগার্ট। অবশ্যই চিনি ছাড়া। এইসব কৃচ্ছসাধনের পর তিন্নি যখন জিন্সের ওপর টি চাপিয়ে বেরোয় তখন একটা আলাদাই জেল্লা থাকে। রাস্তায় আমার সঙ্গে তার দেখা। সে বললে , নেক্সট উইকটা থাকবো না। ঠাম্মার ডেথ হয়ে গেছে না! দোষ পাওয়া গেছে তো। ড্যাড বললো গোয়া গিয়ে কি একটা দিতে হবে। গোয়া গিয়ে পিন্ডি দিচ্ছে বুঝি আজকাল? আমি একদম জানতাম না।আকাট থেকে গেলাম। গয়া টয়া তাহলে ব্যাক ডেটেড। গোয়া তে পিন্ডি! ইন্টারেস্টিং! চলো , তাহলে কিছু খাওয়া যাক।  তিন্নি বললো , হ্যাঁ । চলো। আজ আমার চিট ডে।

কী ডে? চিট ডে? কাকে চিট করবে গো?

না না। আজ যা ইচ্ছে খাবো। অন্যদিন ডায়েট থাকে তো। উইকে একদিন চিট ডে।
আমার তো তাহলে রোজ চিট ডে। দুপুরবেলা চলো বিরিয়ানি খাওয়া যাক।
তিন্নি নাক শিঁটকে বললো, না না। ভীষণ রিচ। অন্য কিছু বলো! রোল? কাবাব? কাচ্চি বিরিয়ানি? সিজলার? ফ্রায়েড চিকেন? কোনোটাই না? তবে কি তুমি স্যান্ডউইচ আর লস্যি খাবে? তিন্নি বেরসিক না। শেষমেষ গিয়ে ঠেকল পিৎজাতে।
চলো পিৎজা হাট যাই। পিৎজা হাট যেদিন খুলেছিল তিন মাইল লম্বা লাইন হয়েছিল। সেই থেকেই অ্যালার্জি। গিয়ে দেখলাম তার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে ভিড়। হৃদয় ভরে এক্সট্রা চিজ। আমি বললাম, একগাদা টাকা খরচা করো না। ঐ দ্যাখো একটা চিকেন সসেজ আছে। একশো নিরানব্বুই। ঐটে অর্ডার করো। দুশো দশ টাকা ধরে দিয়ে বিল নিয়ে দুজনে মুখোমুখি বসে আছি তো বসেই আছি। পিৎজা হাটের সুন্দরী বালিকারা অর্ডার নিয়ে চলেছে। টেবিলে টেবিলে টিন এজারদের উপচে পড়া ভিড়। হরেক রকম পিৎজা আসছে ট্রে বাহিত হয়ে। গন্ধ ম’ ম’ চাদ্দিক। টেনে টেনে পিৎজা ছিঁড়ছে লোকজন। চিজ গড়িয়ে পড়ছে প্যাতপ্যাত করে। ওটা না হলে ঠিক পিৎজা খাওয়া হয় না। উপচে পড়ে হালুম হুলুম করে খাচ্ছে লোকে। একজন আবার অর্ডার করলেন, ঐ যে ঐট্টা দিন। এইট টা যেখানে আছে। পিৎজা বয় বললো, আটটা ম্যাডাম? হ্যাঁ হ্যাঁ ।এইট টা। এসব শুনতে প্রাগৈতিহাসিক মনে হতে পারে বটে তবে ঘটমান বর্তমান।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তিনি এলেন। ধূমায়িত ট্রে। উপুর হয়ে সসেজ খুঁজছি আমি। আসলে সসেজ বলতে আমি বুঝি কেভেন্টারের নরম, রসালো পুরুষ্টু তুলনাহীন সসেজ। দুটো খেলেই হাফ ডিনার হয়ে যাচ্ছে। এখানে সসেজ কোথায় গো? ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখতে হবে তো। ছিমছাম স্মার্ট ট্রে খানি। পরিবেশনকারিণীর মতোই মনোহর। তার ওপর গোলাকৃতি চ্যাপ্টা পাউরুটি খানি। না না।ওকে পিৎজা বেস বলে। বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। চার ভাগে ভাগ করা। মাঝে একটা প্ল্যাস্টিকের আংটা। এরা এখনো প্ল্যাস্টিকের আংটা দিচ্ছে? এই গরম খাবারে? তিন্নি স্যানিটাইজার মাখছে।
তুমি হাত দিয়ে খাবে তিন্নি?
না। মানে ঐ অভ্যেস তো?
অ। সসেজ কই?
অনেক খুঁজে পেতে দেখি একটি কড়ে আঙুল সদৃশ সসেজ চারভাগে বিভক্ত হয়ে চারটি পিৎজা বেসের ওপর অবস্থান করছেন। চিজের সঙ্গে লেপ্টে একটা মাখামাখি কান্ড বটে। মুখে দিলে টের পাওয়া যাবে না কি খেলাম। যা হোক করে ঐ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সসেজদানা মুখে চালান করে দেখি খাবার মতো আর কিস্যু নেই। সামনে পড়ে আছে তিনকোণা পিৎজা বেস নামে পাউরুটি। তার ওপর একটু মাখনের ছ্যাঁকা পড়েছে। নামে মাত্র চিজ।
তিন্নি মন দিয়ে পিৎজা খাচ্ছে। আমার আর ও বস্তু গলা দিয়ে নামছে না। মাশরুম চাইলেও ঐ এক দশা হবে জানি। এর চেয়ে পাউরুটি সেঁকে মাখন লাগিয়ে চিনি ছড়িয়ে খাওয়া ঢের ঢের ভালো। তিন্নি যেন অমৃত খাচ্ছে। গা জ্বলছে। আবার গান বাজছে! ইহহহহ! বললাম বিরিয়ানি খাই চল, তো না! রিচ! আর এটা? আস্তে আস্তে বললাম, পচ্চন্ড ক্যালরি।
তিন্নি চমকে উঠে বললো, কীইইইইই?
খুব চিন্তিত মুখে বললাম, এতে ভীষণ ক্যালরি। তুমি জানতে না?
ফ্যাকাশে হয়ে তিন্নি বললো, নাআআআআ। কত?
ঐ রে ময়দার তাল খাচ্ছো ওতে প্রায় চারশো ষাঠ আর ঐ প্যাতপ্যাতে চিজে দুশো ছেষট্টি আর…গুগলকে লাঠি করে বলে যাই..
নাআআআআ। আরেকটা চিৎকার।
এই ধরো কুড়িটা হাতরুটির সমান। মানে তোমার দু মাসের ইয়োগা গান টু রটস।
তিন্নি হাত থেকে কাঁটা পড়ে গেল।
দিনের শেষে আচ্ছা করে চিকেন কষা। সঙ্গে ফুলকো লুচি। ক্যালরি চুলোয় যাক!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।