জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর।
বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন।
চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।
লিখেছন মৃদুল শ্রীমানী
আমাদের দেশে বিচার ব্যবস্থার একটি ইতিহাস আছে। ফৌজদারি অপরাধের বিচার তার বাইরে নয়। আমাদের সংবিধানে ক্ষমতার বিন্যাসটিও করা আছে। আইনসভার মানে পার্লামেন্ট , যার দুটি কক্ষ, লোকসভা ও রাজ্যসভা; আর রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা, তার উপর কোনো কোনো রাজ্যে বিধান পরিষদ। এই সমস্তটা নিয়ে আইনসভা। আইনসভা কেন? না , ওঁরা নতুন নতুন আইন তৈরি করেন, পুরোনো আইনকে হালফিল মতে সংশোধন করেন। এমনকি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মান্য করে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাত্রা সাপেক্ষে সবটুকু না হলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য ব্যবস্থা আছে।
সুপ্রিম কোর্টের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে কিন্তু আইনের রদবদলের দিকে কড়া নজর রাখবে। যদি সুপ্রিম কোর্ট দ্যাখে যে আইনের রদবদলটি ভারতীয় সংবিধানের সাথে সুরে মেলে না, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের একতিয়ার থাকে যে আইনটি বদলানোর। সংবিধান সংশোধন করে সংবিধানের মূল প্রাণসত্ত্বাটাকে মেরে দিতে পারে না আইনসভা। এভাবেই সুপ্রিমকোর্টের একতিয়ার দেওয়া আছে।
এদেশে কোন্ বিষয়ে আইন বানাবার একতিয়ার কার হাতে, সেটাও সংবিধানে বলা আছে। বিষয় ধরে ধরে কোন্ টা কার, তা বলা আছে।
আইন প্রয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে। আর এইরকম ভাগ বাঁটোয়ারা করে ক্ষমতা অর্পণ করার একটাই লক্ষ্য, দেশে যাতে একনায়কতন্ত্র গড়ে না ওঠে।
যার যার ভাগের কাজ সে সে করবে আর কেউ অন্যের একতিয়ারে অনুপ্রবেশ করবে না।
এদেশের মিলিটারি রাষ্ট্রপতির আজ্ঞাবহ। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কমাণ্ডার। আর রাষ্ট্রপতিকে চলতে হয় মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী। এদেশের রাষ্ট্রপতি নাগরিকদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন না। সাংসদ ও বিধায়কদের ভোটের মাধ্যমে তিনি দায়ভার পান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও সরাসরি কেউ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না। আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা স্পিকারের কাছে প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবি জানালে প্রকাশ্য ভোটে সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিয়ে তবে দলনেতা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন।
এইসব পদ্ধতির মাধ্যমে একনায়কতন্ত্র গড়ে ওঠার পদ্ধতিটি ঠেকানোর ব্যবস্থা করা আছে আমাদের দেশে।
যা আইনের বইতে নেই, যার সপক্ষে নতুন আইন তৈরি করা হয় নি, তেমন খামখেয়ালি কাজ কেউ করতে পারে না। পুলিশ হলেও পারে না।
হ্যাঁ, আমি বলছি, ফৌজদারি অপরাধে শাস্তি দেবার একতিয়ার ফৌজদারি আদালতের। জেলা দায়রা জজ সেই ফৌজদারি আদালত পরিচালনা করেন। দায়রা জজ মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন। কিন্তু নিজের খুশি হলেই দায়রা জজ ফাঁসি দিতে পারেন না। হাইকোর্টের থেকে কনফার্ম করিয়ে নিতে হয়। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল করার সুযোগ থাকে। দায়রা জজের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে, আর হাইকোর্টের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়। ফাঁসি কার্যকরের আগে আসামির সুযোগ রয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করার। মন্ত্রিসভার পরামর্শ মোতাবেক রাষ্ট্রপতি তাঁর ক্ষমা প্রদর্শন করার একতিয়ার প্রয়োগ করেন।
বিরলতম ক্ষেত্রে আমাদের ফৌজদারি আদালত প্রাণদণ্ড দিতে পারেন। সে প্রাণদণ্ড বলতে ফাঁসি। ফাঁসি কার্যকরের আগে দেখে নেওয়া হয় আসামি সুস্থ আছে কিনা। অসুস্থ, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়া হয় না। গর্ভবতী নারীকেও ফাঁসি দেওয়া হয় না। সভ্যদেশ হিসেবে ভারতে খুব সহজে কাউকে ফাঁসিতে লটকে দিয়ে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলা হয় না।
ফাঁসি। হ্যাঁ, বিরলতম ক্ষেত্রে ফাঁসিই এদেশের একমাত্র প্রাণদণ্ড। গ্যাসচেম্বার নয়, বিষাক্ত ইনজেকশন নয়, পাথর ছুঁড়ে মারা নয়, ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে মৃত্যু এদেশের একমাত্র পদ্ধতি। গুলি করে মেরে ফেলা আমার দেশে আইনের স্বীকৃতি পায় নি।
সেই ফাঁসি কার্যকরের দায়িত্ব পর্যন্ত পুলিশকে দেওয়া নেই। ফাঁসি দেবার আলাদা লোক আছে।