• Uncategorized
  • 0

ভগৎ সিংহ -এর জন্মদিনে বিশেষ রচনা

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।

২৮ সেপ্টেম্বর ১৯০৭ তারিখে বর্তমান পাকিস্তানের বঙ্গাতে তাঁর জন্ম। ২৩ মার্চ ১৯৩১ , তেইশ বছরের ভগৎ সিংহের ফাঁসি। লাহোর জেলে।

অমৃতের পুত্র মোরা, কাহারা শুনালো বিশ্বময়
আত্ম বিসর্জন করি আত্মারে কে জানিল অক্ষয়…..
আজ ভগৎ সিং এর জন্মদিবস। প্রকৃত ও আপোসহীন স্বাধীনতার কথা ভাবলে ভগৎ সিংহের কথা খুব মনে পড়ে। ভগৎ সিংহ কে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আজ আমার সেই গানটা মনে পড়ে যাচ্ছে : “তোমার ওই শিকল ভাঙা এমন রাঙা মূর্তি দেখি নাই… সেদিন হাতের দড়ি, পায়ের বেড়ি , দিবি রে ছাই করে..”.মনে পড়ছে “মরণ মাঝে তোর জীবনের হোক না পরিচয়.. চিরদিনের মত তোমার ছাই হয়ে যাক ভয়..”. জালিয়ানওয়ালাবাগ এ মাইকেল ও’ ডায়ারের নেতৃত্বে নিরস্ত্র ভারতীয়ের সমাবেশের উপর গুলিচালনার ঘটনায় সারা ভারতেই একটা বিক্ষোভ জমেছিল। কিন্তু রাষ্ট্রশক্তির দাঁত নখের বহর দেখে অনেক আগুনখেকো রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিরাও সময়োচিত প্রতিবাদে ভরসা পান নি। সিঁটিয়ে গিয়েছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এই সময় পুরোধা প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব হিসেবে এগিয়ে আসেন। পরাধীন ভারতীয়ের উপর ব্রিটিশের অমানুষিক নির্লজ্জতাকে ধিক্কার দিয়ে কবি নাইটহুড পরিত্যাগ করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সন্ত্রাসবাদী ধারার যুক্তিহীন, সাংগঠনিক প্রতিভাহীন কার্যকলাপের উপর কোনো আস্থা না থাকলেও, আবেদন নিবেদনের কলাকুশলীদের প্রতিও তাঁর কোনো শ্রদ্ধা ছিল না। ভারত স্বাধীন হবে এটা অন্তরের গভীরে বিশ্বাস করলেও বাস্তবে সে স্বাধীনতা নিছক ক্ষমতা হস্তান্তরে পর্যবসিত হবে, এমন উদ্বেগ কবির ছিল। যৌবনে কংগ্রেসের একটি অধিবেশনে কবি গেয়েছিলেন – “আমায় বোলো না গাহিতে বোলো না। … এ যে নয়নের জল, হতাশের শ্বাস, কলঙ্কের কথা, দরিদ্রের আশ, এ যে বুক-ফাটা দুখে গুমরিছে বুকে গভীর মরম বেদনা।” ওই গানেই বলছেন – কে জাগিবে আজ, কে করিবে কাজ, কে ঘুচাতে চাহে জননীর লাজ -”
পৌরুষ দৃপ্ত প্রতিবাদ যুক্তির পথে, ইতিবাচক ও গঠনমূলক পথে এগিয়ে চলুন, কবি এমন ইচ্ছা প্রাণ ভরে লালন করে গিয়েছেন। স্বাধীনতা মানে যে আসলে দেশে্যযর দরিদ্রতম মানুষগুলির বেঁচে থাকা, ভালো থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠা বোঝায়, এটা অন্তর দিয়ে বুঝতেন বলেই রাশিয়ায় গিয়ে সোভিয়েত ব্যবস্থায় গরিবের শিক্ষা আয়োজন আর সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ দেখে বড়ো উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। রাশিয়া ভ্রমণকে বলে উঠলেন এ জন্মের তীর্থ দর্শন। নিজের দেশের সাংগঠনিক ব্যক্তিত্বের অভাব দেখে বলে ফেললেন আমাদের লোকেরা পুরো একখানা মানুষ নয়।
নিবীর্যতার প্রতি বরাবর ধিক্কার ছিল কবির।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভগৎ সিং যেন সেই রকম দৃপ্ত পৌরুষ। “বধিরকে শোনানোর জন্য উচ্চ কণ্ঠের প্রয়োজন।” এই ছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি। দিল্লিতে ব্রিটিশ ভারতের সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ এসেম্বলিতে তিনি ও তাঁর সহযোগী বটুকেশ্বর দত্ত একটি বোমা ছোঁড়েন। বোমাটি একটি যেমন তেমন বোমা ছিল না। বরং বোমাটি যাতে কাউকে শারীরিক ভাবে আঘাত না করে, তার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রেখেই প্রস্তুত হয়েছিল। বোমার সাথে লিফলেট ও বিলিয়ে ছিলেন সিংহ ও দত্ত, দুই বিপ্লবী। নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টায় এই কাজ করেন। যে বোমায় একজনও আহত হন নি, সেই রকম বোমা ছুঁড়েছেন,
এই দোষে ১৯৩১ সালে ভগৎ সিংহের ফাঁসি হয়। রবীন্দ্রনাথ যেন ভেতরে ভেতরে এমন একটা সিংহহৃদয় মানুষকেই চাইতেন। “খাঁচাখানা দুলছে মৃদু হাওয়ায়, আর তো কিছুই নড়ে না রে, ….ওই যে প্রবীণ, ওই যে পরম পাকা – , চক্ষু কর্ণ দুইটি ডানায় ঢাকা…” বলছেন ” ভোলানাথের ঝোলাঝুলি ঝেড়ে, ভুলগুলো সব আন রে বাছা বাছা।” বলছেন “ঘুচিয়ে দে ভাই পুঁথি পোড়োর কাছে পথে চলার বিধি বিধান যাচা।” কবিতার নাম সবুজের অভিযান, কাব্যগ্রন্থ বলাকা, রচনা তারিখ ১৫ বৈশাখ, ১৩২১।
একটি কবিতায় আরো বলছেন “আমি যে দেখিনু তরুণ বালক উন্মাদ হয়ে ছুটে, কী যন্ত্রণায় মরেছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে।” কবিতার নাম “প্রশ্ন”। কাব্যগ্রন্থ “পরিশেষ”। লেখা হয়েছে পৌষ ১৩৩৮।
ভগৎ সিংহ (১৯০৭ – ১৯৩১) কে বুঝতে রবীন্দ্র সৃষ্টি আমায় পথ দেখায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।