শুনলে অবাক হবেন এক একটি জিলাপির ওজন প্রায় এক কেজি থেকে তিন কেজির জিলিপি! এরকমটি আর কোথাও দেখেছেন কি আপনি ?ছোট থেকে বড় সাইকেলের চাকার মতো সাইজের ?
এই ভারতে আর কোথাও এখানকার মতো এতো বড় ও সুস্বাদু জিলিপি পাবেন না।
হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি ! নিজের চোখে দেখতে হলে তাহলে এবার আপনাকে আসতেই হবে বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত এক প্রত্যন্ত গ্রাম, যার নাম- কেঞ্জাকুড়া।
ভোজন রসিক হিসেবে বাঙালীর সুখ্যাতি কারো অজানা নয়। আর সেটি যদি মিষ্টি হয় তো কোনো কথাই নেই। তাও আবার যে সে মিষ্টি নয়, জিলিপি! যা একটির সাইজ দেখলে মাথা ঘুরে যাওয়া টাই স্বাভাবিক।
জিলিপি একটি বিদেশী শব্দ যেটা পার্সি ভাষা থেকে সংগৃহীত। কেউ বলে জিলিপি” আবার কেউ বা বলে ঝিলাপি।
প্রতি বছর ভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে রাঢ় বঙ্গে ভাদুপুজা হয়। আর সেই পুজাকে কেন্দ্র করেই কেঞ্জাকুড়া গ্রামে বসে এই জিলিপির মেলা।
বাঁকুড়া ছাপিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় করেন, একদিনের এই জিলিপি মেলায়। এই সময় এখানে প্রতিটা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে এই জিলিপি তৈরি হয়। এই মেলায় প্রধান আকর্ষণ হলো জিলিপির সাইজ।এমনকি কে কতো বড় সাইজের জিলিপি করতে পারেন তা নিয়ে কারিগরদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এটি স্বাভাবিক ভাবে জিভে জল আনা, গরম মুচমুচে স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়।
এখানকার মানুষের এই দিনটিতে নিজেদের প্রিয়জনদের কাছে জিলিপি পৌঁছানোর বিশেষ রীতি রয়েছে।
এতবড় বৃহদাকার জিলিপি বাঁশের গোল চাঁচ এবং শুকনো শালপাতা ও পেপার দিয়ে মুড়ে একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে প্যাকেজিং করা হয়।
এই সময়টাই শরৎকালের অনুভূতি থাকে। চারিদিকে সাদা কাশ ফুল ও বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধে পুজোর একটা সাজো সাজো ভাব থাকে।
জানা যায় আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর ও তাঁরো বেশি আগে, কেঞ্জাকুড়ার পাশের হানুলিয়া নামে এক ছোট্ট গ্রামের- মদন দত্ত নামে এক দক্ষ মিষ্টির কারিগর, সেই সময় তিনি চিনি দিয়ে একটি বিশেষ দরজার গেট বানিয়ে কেঞ্জাকুড়ার মানুষকে চমক দেখিয়ে ছিলেন। এরপর তার কিছুদিন পরেই তিনি উৎসাহিত হয়ে আবার একটি পরিকল্পনা আসে করেন। যেটি বিরি বেশনের খামি করে এরপর ছিদ্র যুক্ত বিশেষ ধরনের কাপড়ের একটি থুপি করে হাতের পাঁক দিয়ে ঘুরিয়ে, ঘি ভরতি গরম কড়াইয়ে ভেঁজে সেটাকে চিনির রসে ডুবিয়ে প্রায় তিন কেজির সাইজের একটা বৃহদাকার জিলিপি তৈরী করে সবার চোখে তাক লাগিয়ে ছিলেন। এরপর তাঁকে অনুসরণ করে এখানে সমস্ত মিষ্টান্ন ভাণ্ডারেই এই জিলিপি তৈরি হয়। তারপর থেকেই এই কেঞ্জাকুড়ার জিলিপি বিখ্যাত হয়ে উঠে। সেই সময় এখানে এটি প্রথম বিক্রি হয় দুঃখভঞ্জন দও এর মিষ্টির দোকানে। যা পরবর্তীকালে দত্ত মিষ্টান্ন ভাণ্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে এই দোকানের মালিক- অশোক দত্ত । এই জিলিপি কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। ক্রেতার যেমন সাইজের জিলিপির প্রয়োজন হয়, অর্ডার করলেই তা অতি সহজেই পাওয়া যায় । বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে এখানে প্রচুর জিলিপি বিক্রি হয়। আবার এই দিনটিতে ভাদুপূজা ।
ধীরে ধীরে এই মেলা এখানকার মানুষের খুবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ।এরকম প্রকাণ্ডকায় জিলিপি চাক্ষুষ করতে হলে চলে আসুন বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়া গ্রামে। কি,এবছর হবে না? ওকে, প্ল্যান করে রাখুন এখন থেকেই আর চলে আসুন আগামীবার। ট্রেনে এলে ছাতনা স্টেশনে নেমে বাস বা গাড়ি করে চলে আসুন কেঞ্জাকুড়ায়। সঙ্গে তাঁতশিল্পের গামছা ও কাঁসা শিল্পের কাজও সংগ্রহ করতে পারেন, দেখতে পারেন, আর সময় থাকলে শুনে নিতে পারেন ভাদুগান