সেই যে ছোটবেলায় বরানগরে স্কাউট ক্লাবে যেতাম। আমি ছিলাম কচিকাঁচার দলে। বয়সটাও ওইরকম ছিল কি না। থ্রি কি ফোর হবে। দশম স্বামীজি স্কাউট দলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। ছোটদের নাটক “হিংসুটে দৈত্য”। অস্কার ওয়াইল্ডের নাম তখনও শুনি নি। “সেলফিশ জায়েন্ট” নামে পাঠ্যবস্তু ছিল নবম শ্রেণির ইংরেজি বইতে। তখন পেলাম সেলফিশ জায়েন্ট। পড়তে গিয়ে কি মজা। আরে, এ নাটক যে আমি করেছি। ছোটবেলায় করা নাটক। গঙ্গাতীরে রামদা’দের বাড়িতে নাটকের মহলা হত। পরিচালক দরদ দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত থাকতেন। দৈত্যের পার্ট ছিল চমৎকার। আর বাচ্চা খেলুড়েরা। আর শীত, আর ঝঞ্ঝা আর কুয়াশা।
আমাকে দিয়েছিলেন যিশুর পার্ট। ওম্মা, গোটা নাটকে আমি মাত্রই দুবার স্টেজে ঢুকবো। কথাও অতি স্বল্প। একা ছোটটি গাছের ডালে চড়তে পারিনি বলে গাছটি থেকে শীত দূর হয় নি। দৈত্য সেজে পিকলা দা আমায় গাছে তুলে দেবে। অমনি গাছে আসবে ফুল, আসবে প্রজাপতি। বসন্ত এসে যাবে। পিকলা দা তখন ভালো দৈত্য। মনে আর হিংসে নেই।
তারপর একেবারে শেষ পর্যায়ে আবার আমার প্রবেশ। ভালো দৈত্য পিকলা দা অসুস্থ। মরণাপন্ন। আমি যিশু। আমার করতলে আলতা দিয়ে আঁকা ক্ষতচিহ্ন। আমি এসেছি দেখে রোগখিন্ন অথর্ব দৈত্য বহু কষ্টে চোখ খুলে তাকায়। দেখতে পায় আমার আলতা রাঙা করতল। আমায় চিনতে পারে অসুস্থ রোগজর্জর দৈত্য। আমার হাতে আলতা দিয়ে আঁকা ক্ষতচিহ্ন দেখে রেগে ওঠে দৈত্য। কে তোমাকে অমন করে মেরেছে? মৃদু হেসে বলে উঠি, এ আমার ভালবাসার প্রাপ্তি।
সহসা কী যেন মনে পড়ে যায় দৈত্য সাজা পিকলা দা’র। ক্ষীণ অথচ গাঢ় গভীর শ্রদ্ধাশীল কণ্ঠে জানতে চায়, কে আমি। আমি বলি, তোমাকে আমি নিয়ে যেতে এসেছি। একদিন তুমি আমাকে তোমার বাগানে খেলতে দিয়েছিলে। আজ তোমার আমার বাগানে যাবার সময় হোলো।
পিকলা দা আর উঠবে না। মরণঘুমে পেয়েছে তাকে। আমার মাথার উপর আলো নিবিড় হয়ে আসে। আমার পরনে শ্বেতশুভ্র সিল্কের পোশাক। হাতে রুপোর দণ্ড। দৈত্য মরছে। মরছে না। অক্ষয় লোকে স্থান পেতে চলেছে। আমার মুখে রহস্যমাখা হাসি। চলো, তোমার চিরকালের বাগানে চলো।
হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা হল।
দুঃখ একটাই, আমার সে অভিনয় আমি দেখিনি।
আজ সেই সেলফিশ জায়েন্টের লেখকের প্রয়াণ দিবস। অস্কার ওয়াইল্ডের আজ মৃত্যু দিন। ওয়াইল্ডের শেষে থাকত একটা e.