প্রবন্ধে ড.চন্দন কুমার কুণ্ডু

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা- দেশভাগ : বর্তমান প্রেক্ষিত

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও দেশভাগ শুধু ভারতবর্ষেই নয় পৃথিবীর নানা দেশেরই এক ভয়াবহ,দুর্ভাগ্য জনক ঘটনা; যা ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবন,সঞ্চিত মূল্যবোধ এবং পুঞ্জিভূত স্বপ্ন ও স্মৃতিকে তছনছ করে দেয়।
ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান -এই দুই ধর্মবিশ্বাসী মানুষজন দীর্ঘদিনের ( তুর্কী আক্রমন ও তার পরবর্তী) অরাজকতার অন্ধকার কাটিয়ে অনেকটা কাছাকাছি আসতে পেরেছিল কিন্তু কোনোদিনই এক সূত্রে বাঁধা পড়েনি।বরং ধর্মীয় আচার আচরণের বৈপরীত্যেই উভয়ের সংঘাত ত্বরান্বিত ও অনিবার্য হয়। সম্পর্কের অবনতি দাঙ্গার চেহারা নেয়। যে দাঙ্গা শুধু বাংলা নয় ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশেও ব্যাপক আকার ধারণ করে।যার ফল স্বরূপ সীমানা কমিশন খাড়া লাইন টেনে ভাগ করে দেন ভারতবর্ষকে।
দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি বসবাসকারী ভিন্ন ধর্মীয়,ভিন্ন ভাষাভাষি ,বা ভিন্ন জাতির মানুষ,যাদের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হয়,কথা হয়,লেনদেন চলে তাদের মধ্যেই ভেতরে ভেতরে জমতে থাকে অসন্তোষ । শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব তৈরি হতে থাকে নানা ভাবে। এর পরই সামান্য কোন কারণে পরস্পর পরস্পরের পাড়া আক্রমণ করে।আক্রান্ত হয় গ্ৰাম। বিভিন্ন সম্প্রদায়, ভাষা বা জাতির মানুষ পাশাপাশি থাকলেই হল; দাঙ্গা শুরু হলেই এলাকা গুলি সাম্প্রদায়িক গড়ে পরিণত হয় এবং অতি সহজেই আক্রমণ ও আত্মরক্ষার দূর্গে পরিণত হয়। উভয় গোষ্ঠি নিজ নিজ শক্তি প্রদর্শণে মত্ত হয়। উত্তপ্ত প্ররোচনা সৃষ্টিকারী শ্লোগান চলতে থাকে। শুরু হয় লুঠ,হত্যা,নারী ধর্ষণ।অনেক সময় এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির সুযোগ নেয় এলাকার সমাজ বিরোধীরা। প্রয়োজনে লাঠি,ছোরা,বন্দুক সবই ব্যবহার করা হয়।ভাবতে অবাক লাগে,এ ধরণের যুদ্ধ কাছাকাছি প্রতিবেশিদের সঙ্গে গোষ্ঠিবদ্ধ ভাবে- যাদের সঙ্গে প্রাত্যহিক দেখাশোনা ও লেনদেন। এ যুদ্ধের কোনো মীমাংসা হয় না,শেষ হয় না যুদ্ধ। ক্ষতিগ্ৰস্ত হয় উভয় পক্ষই। নিরাপত্তার অভাবে অনেকে এলাকা ছাড়ে। অনেকে তা না পেরে পরবর্তী দুর্যোগের দিন গোণে।
ভারতে হিন্দু – মুসলমান দাঙ্গার প্রথম বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে। আমেদাবাদ ও কাশ্মীরের দাঙ্গা ছাড়াও ১৭৯৫খ্রিঃ হিন্দু- মুসলমান দাঙ্গার পরিচয় পাওয়া যায় গুজরাটের সুরাটে।
১৯৪৬ খ্রিঃ ১৬ আগস্ট কলকাতায় যে নজির বিহীন দাঙ্গা শুরু হয় তার ফলে সারা ভারতের প্রেক্ষাপট দ্রুত বদলাতে থাকে।১৬-১৯ আগস্ট এই চার দিন দাঙ্গা চলে। ১সেপ্টেম্বর থেকে তা বোম্বাই হয়ে১০ অক্টোবর নোয়াখালি , ২৫ অক্টোবর বিহার,নভেম্বরে যুক্তপ্রদেশের গড়মুক্তেশ্বর এবং ‘৪৭ এর মার্চে পাঞ্জাবে ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৪৬ খ্রিঃ-এর ২৯ জুলাই ডাক-তার কর্মীদের ধর্মঘটকে সমর্থন করে এক ঐতিহাসিক ধর্মঘট পালিত হয় বাংলায়। হিন্দু- মুসলমান নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক মানুষ যোগ দেয় এতে।ঠিক এই দিনই বোম্বেতে সারা ভারতমুসলিম লীগ কাউন্সিলের সভায় ঘোষিত হয় প্রত্যক্ষ সংগ্ৰাম বা ‘ ডিরেক্ট অ্য্যাকশন’ এর আহ্বান। এই ঘোষনার ঠিক আঠারো দিন পরে ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্ৰামের নামেএক অমানুষিক হিংসার তাণ্ডবলীলা শুরু হয় কোলকাতায়।
২৯ জুলাই বোম্বাই -এ’ ডিরেক্ট অ্য্যাকশন্’ এর আহ্বান। ধর্মঘটৈর কারণে ৩০ জুলাই সংবাদপত্র বন্ধ ছিল। ৩১জুলাই কলকাতার লীগপন্থী দৈনিক’ মর্নিং নিউজ’ এর প্রথম সংবাদ শিরোনাম ছিল: “ধর্মঘট নয় প্রত্যক্ষ সংগ্ৰামের সিদ্ধান্ত: “Historic decisions made at Bombay.” প্রত্যক্ষ সংগ্ৰামের কারণ হিসাবে লীগ কংগ্ৰেসের একরোখামি ও ব্রিটিশের বেইমানিকে দায়ী করেছিল। বলা হয়েছিল,” মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং’স্বাধীন সার্বভৌম’ পাকিস্তান রাষ্ট্র” অর্জনের জন্যই প্রত্যক্ষ সংগ্ৰামের ডাক দেওয়া হয়েছে।শুধু এটুকুই প্রত্যক্ষ সংগ্ৰামের ঘোষণা ছিল না। জিন্নার বিবৃতিতে স্পষ্ট হুমকিও ছিল: “Today we have also forged a pistol and are in position to use it.” এর পরেই পুরোপুরি ভাবে আয়োজন শুরু হয়ে যায়। বাংলার লীগ সভাপতি নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন,”আর দেরি নয়, সময় এসে গেছে।” কলকাতায় মুসলিম ন্যাশানাল গার্ড গঠন করা হয় এবং প্রত্যেকটি জেলায় এর প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়ে যায়।বাংলার লীগ প্রধানমন্ত্রী সোহরাবর্দী মুসলমান যুব সমাজ কে সর্বশক্তি নিয়ে প্রস্তুত হতে বলেন।
প্রত্যক্ষ সংগ্ৰাম কেমন হবে,জিন্নাকে প্রশ্ন করা হলে জিন্না জানান,” তিনি নীতিশাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করতে চান না।” আর নাজিমুদ্দিন জানিয়েছিলেন,” লীগ অহিংসায় বিশ্বাস করে না।” তেমনি আবার মহম্মদ উসমানের উত্তেজক ভাষায় উর্দু প্রচারপত্র প্রকাশিত হচ্ছিল।একটি প্রচার পত্রের ভাষা ছিল এই রকম: “আশা ছেড়ো না। তলোয়ার তুলে নাও।ওহে কাফের,তোমার ধ্বংসের দিন বেশি দূরে নয়।” প্রচার পত্রটিতে তরবারি হাতে জিন্নার ছবি ছাপা হয়েছিল।
হিন্দু মহাসভাও পিছিয়ে ছিল না। তারাও প্রচারপত্র বিলি করে।হিন্দু সেবক সংঘ নানা জায়গায় পোস্টার দেয়। হিন্দুদের প্রচারপত্রে হুঁশিয়ারী ছিল,হিন্দুদের সাবধানে থাকতে বলা হয়েছিল।সেই সঙ্গে ১৬ আগস্ট লীগের ডাকা ধর্মঘট ভেঙে দিয়ে লীগ সরকারকে সমুচিত শিক্ষা দেবার আহ্বান ও ছিল। হিন্দুরাও পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব ও আখড়ায় তৈরী হয়েছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বৃটিশ নিশ্চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
ছেচল্লিশের “The great Calcutta Killing” শুরু হয়েছিল ১৬ আগস্ট। নৃশংসতম এক মারণ যঞ্জ চলেছিল চারদিন ধরে।এই নরমেধ যঞ্জে কমপক্ষে ৫ হাজার(মতান্তরে ১০হাজার) নর- নারী- বৃদ্ধ- শিশু নিষ্ঠুর ভাবে নিহত হয়। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি পুড়ে ছাই হয়।নারীর অমর্যাদাও ঘটে।
১৯৪৭ খ্রিঃ ২জুন সর্বদলীয় বৈঠকে মাউন্টব্যাটন দেশভাগের প্রস্তাব পেশ করলে তা অনায়াসেই গৃহীত হয়। কংগ্ৰেস ও অকালীদল লিখিত সম্মতি জানায়।লীগের পক্ষে জিন্নার সম্মতি ছিল মৌখিক। ৩ জুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এ্যাটলী হাউস অফ্ কমনসে ভারত ভাগের কথা ঘোষণা করে বলেন,” ভারতকে অখণ্ড রাখার জন্য ক্যাবিনেট মিশনযে প্রস্তাব দিয়েছিলেন,ভারতের নেতারা যেহেতু তা গ্ৰহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন ,দেশভাগ তাই হয়ে দাঁড়াল অনিবার্য বিকল্প।” ৮ জুলাই ইংল্যাণ্ড থেকে সিরিল র‍্যাডক্লিফ এসে পৌঁছান। দেশভাগের জন্য মাউন্টব্যাটন তাঁকে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় দেন।নেহেরু ও জিন্না চান আরো দ্রুত ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে। পাঁচ সপ্তাহের ও কম সময়ে বাংলার জন্য রোয়েদাদ( অ্য্যাওয়ার্ড) ৯ আগস্ট তৈরী হয়ে যায়।পাঞ্জাবের ১৯ আগস্ট।১৫ তারিখ র‍্যাডক্লিফ ভারত ত্যাগ করেন।
সীমানা কমিশন এই ভাবে খাড়া লাইন টেনেই ভাগ করেছেন ভারতবর্ষকে।এর পরিণামে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে দেশ ; অগণিত নর-নারী এপার থেকে ওপারে চলে গেছেন।অসংখ্য মানুষ ওপারের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে এসেছেন এপারে।প্রার ২ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।লাঙ্ছিতা হয়েছেন তার চেয়েও বেশি সংখ্যক নারী। প্রায় ১ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন। হত্যা,রক্তপাত,নারীহরণ আর নির্যাতনের হাত ধরে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতবাসী লাভ করে এক খণ্ডিত স্বাধীনতা।
এত কিছুর পরেও শিক্ষা হয়নি আমাদের । প্রিয়জন হারানো,ছিন্নমূল হওয়া,খণ্ডিত স্বাধীনতা আর দেশভাগের পরেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নির্মূল করা যায় নি। ছোটোখাটো দাঙ্গার কথা ছেড়ে দিলেও দেখা যায়, ৩১ অক্টোবর ১৯৮৪ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর শিখ দেহরক্ষির গুলিতে প্রাণ হারালে দিল্লি,হরিয়ানা,মধ্যপ্রদেশ,উত্তর প্রদেশ ও বিহারে নির্বিচারে শিখ হত্যা চলে।এই দাঙ্গায় সরকারি হিসাবে মৃত্যু হয় ৩৩৫০ জনের।অন্যমতে ৮০০০-১৭০০০ শিখকে হত্যা করা হয়।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ হারান ২ হাজার মানুষ।
২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় মৃত্যু হয় ২০০০ জনের।
২০১৩ সালে উত্তর প্রদেশের মুজফফর নগরে হিন্দু- মুসলমান দাঙ্গায় প্রাণ হারান ৩০এর বেশি মানুষ।
২০১৮ সালের একটি রিপোর্ট এ পাওয়া তথ্য অনুসারে ২০১৭ সালে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছৈ ৮২২ টি। এতে নিহত হয়েছেন ১১১জন মানুষ। আহত ২৩৮৪ জন। এই দাঙ্গার শীর্ষে রয়েছে উত্তর প্রদেশ। এখানে ঐ বছর দাঙ্গা হয়েছে ১৯৫টি। নিহত- ৪৪জন।আহত ৫৪২ জন। কর্ণাটকে দাঙ্গা হয়েছে ১০০ টি।নিহত ৯। আহত ২২৯। রাজস্থানে দাঙ্গা হয়েছে ৯১ টি। নিহত ১২।আহত ১৭৫জন। বিহারে দাঙ্গা হয়েছে ৮৫টি। নিহত ৩।আহত ৩২১।মধ্যপ্রদেশে দাঙ্গা হয়েছে ৬০টি।নিহত ৯।আহত ১৯১।পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গা হয়েছে ৫৮টি ।নিহত ৯।আহত ২৩০। গুজরাটে দাঙ্গা হয়েছে ৫০টি।এতে নিহত হয়েছেন ৮ জন।আহতের সংখ্যা ১২৫।
মনে রাখা দরকার যে, ১৯৪৬-‘৪৭ এর দাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছিল বাংলা ও পাঞ্জাব। পশ্চিমবাংলা সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে আজও পিছিয়ে নেই। বর্তমান প্রেক্ষিতে বরং প্রতিদিন হিন্দুকে আরো বেশি করে হিন্দু হতে এবং মুসলমানকে আরো বেশি করে মুসলমান হতে দেখছি আমরা। শিবরাত্রী,রামনবমী প্রভৃতি উৎসবে হিন্দুদের সশস্ত্র মিছিল ক্ষমতা প্রদর্শনেরই সামীল।কিছুদিন আগেও বাংলার কালচারে তা ছিল না।পাড়ায় পাড়ায় পুজো পার্বনের ঘটা বেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। একই ভাবে মুসলমানদের মধ্যেও মহরমের কালো পোশাক পরে ব্যাপক হারে অস্ত্র প্রদর্শননতুন মাত্রা যোগ করেছে বাংলার সংস্কৃতিতে। স্কুল,কলেজে বাঙালি মুসলমান মেয়েদের বোরখা ও হিজাব এর ব্যবহার চোখে পড়ার মত। এতদিন যা ছিল অ-বাঙালি মুসলিমদের সংস্কৃতি তা চলে এসেছে বাংলায়। পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ ,ঈদগাহ নির্মাণ ও চোখে পড়ার মত। টিভি সিরিয়ালে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মীয় সিরিয়ালের রমরমা বেড়েছে। সোসাল মিডিয়ায় একে অপরের ধর্ম সম্পর্কে কুরুচিকর পোস্ট প্রতিদিন দুই ধর্মীয় মানুষের অসন্তোষকে বাড়িয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত।বাংলায় ব্যাপক ভাবে অবাঙালি হিন্দু ও অবাঙালি মুসলমানের আনাগোনা বেড়েছে। পাড়ায় পাড়ায় হনুমান মন্দির তৈরী হচ্ছে।
মনে রাখা প্রয়োজন যে,’৪৬ এর ” The great Calcutta Killing” বেশিরভাগ অংশ নিয়েছিল এই অ-বাঙালি হিন্দু ও অ- বাঙালি মুসলমানরাই। তার সঙ্গে ধর্মীয় ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ,অর্থ সাহায্য,সরকারি প্রতিনিধীদের যোগদান,রাজনৈতিক প্রতিনিধীদের কর্মকাণ্ড আগামী দিনের হিন্দু -মুসলমান সংঘাতের অশনি সংকেত কে ত্বরান্বিত করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলা তথা ভারতের আকাশে সাম্প্রদায়িকতার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এখন অনেকেই।এখনি সতর্ক না হলে কে বলবে, এর শেষ কোথায়!!!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।