• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ১৩)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ১৩)

আমার জন্মের বহু আগে থেকেই একটা সাধারণ মামুলি ফড়িং শায়িত পথের আঙুলে ; কোমরের ভাঁজে কোনো গাছ কিংবা জানলা-দরজা থেকে বৃষ্টির খোঁজখবর যতই মজবুত করি প্রতিবাত ঢালে ঝকঝকে শহর নগর ঘিঞ্জী শব্দের গন্ধে ভেঙে ওঠে মূর্তিমান রঙে, ছেনির আঘাতে যেসব সকাল ভাস্কর্য হয়ে যায়, পল্লবগ্রাহী বাষ্পীভবন হয়ে ওঠে দূর পলল পাখার বাতাস, আরও দূর উপত্যকায় দ্বিধাগ্রস্ত গরুর গাড়ি এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আলকাতরা-মাখা নুড়িপাথর – আমরা এসবের সামনে দাঁড়াই… যেমন টয়লেটে ইউরিয়াযোনি থেকে চিৎকার ছোঁড়ে স্বচ্ছ ঝাঁঝালো অ্যামোনিয়ার সংগ্রাম, রেচন অঙ্গের ক্ষুধার্ত অভিজ্ঞতায় ভরা সন্তরণ – আমরা নতমস্তকে দাঁড়াই তাদের সামনে এবং একদিন পিছিয়ে আসা স্রোতের থেকে এগিয়ে যায় আলো অনুভবের উচ্ছিষ্ট। পাড়াপড়শির উদ্ধার করা পাটের নীচে, মাটির তলায় যাদের আত্মজীবনী শুয়ে থাকে আমরা তাদের লোকালয়ে টেনে আনি, মরুভূমিতে এনে করি বালিধোয়া, সন্ধে সন্ধে হতে না হতেই ডিমের ট্রে হয়ে ওঠে আমাদের একমাত্র ভরসার আবাসস্থল মশকী দমনক্রিয়ায়। বন-ধুঁধুলের লতায় ঘেরা ঝামা-ইটের গলিতে বনলক্ষীর ঝাঁপি নিয়ে বসে থাকে আমার বাবা-মা, পানাজল ঠেলে স্বর্গত দাদু-ঠাম্মার বাৎসরিকে আমরা যাদের ছবির সামনে এসে দাঁড়াই, তারা কীভাবে সেই শায়িত ফড়িঙের বেশে, লোকে বলে কাক হয়ে গ্যাছে সকলের আত্মারা, এসে দাঁড়ায় ঘুমন্ত কাঁধে : আমি দেখি নমনীয় ঘাসসন্তান। আমরা নতমস্তকে দাঁড়াই তাদের সামনে… এইসব গাছেদের পূর্বপুরুষেরা কন্দখোলা নাকি বাবলায় আলোর ফোঁটা বিক্রি করত বাড়ি বাড়ি ঘুরে, কাছাকাছি তেঁতুল কদম ডুমুর শিশু ভরা নতুনগ্রামে থিতু হয়েছিল যারা পথে পথে বাগাঁচড়া হরিপুর অথবা পাঁজরার ফেরিঘাট ও মফস্‌সলে… : এসবের সামনে দাঁড়াই আজকাল ঘ্রাণ-দৃষ্টি-শ্রুতিময় মাটিতে বিছানো বসতিশূন্য মহাদেশে, নতমস্তকে। পাতাকুড়ানি মহিলার পাঁজরগুঁড়ো আর ফালাফালা ঘাস কবিতার শরীর হয়ে বেঁচে থাকে আজীবন যেন মৃতপ্রায় ফুল, জেগে থাকে শীৎকার শোকে জরা-ব্যাধি-মৃত্যুর ওপারে। জায়মান প্রেমের পিপাসায় লাথি মারে সুখতলা আঙুল, নিড়ানির দাঁত-মুখ থেকে শিল্পকুশল প্রতিবাদ বা সরলতায় আমরা যতটুকু বুঝি পরশ্রীকাতর রেটিনার অভিযোজন ততটুকু বটফল নষ্ট হলে জৈবসারের কপালে নেমে আসে মধুমঙ্গল, ভেতরে থাকে আগুন, কোথাকার কে এক ঘাসফুল! তার মাথায় পা রেখে আমি নমনীয়তার সংজ্ঞা লিখেছি, সহনশীল ভাবমূর্তির কোটরে স্পর্শদোষ গুঁজে ক্ষণপদ, দ্রুত হেঁটে চলেছি যাবজ্জীবন মাঠের সূর্যতোরণের দিকে ; অবেলার সুড়কি হাতে যারা ভাসপাখির হলুদ চোখ অথবা ছানিকাঁটা যকৃতের অরণ্য হতে পারেনি, তাদের এক বুক বাতাস দেওয়ার নামে দুরন্ত কার্বন দিয়ে গেলাম, ছেড়ে গেলাম অ্যালবেডো চোঁয়া ঔরস…

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।