দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৫২)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ৫২
১৫১
তোমার একটা কথার অর্থ আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। তুমি ধরে নিচ্ছ কেন যে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলেই একটা লোক অচ্ছুত হয়ে যায়?
অরুণ প্রশ্ন করলেন।
শ্যামলী বলল, আমি লোকটাকে অচ্ছুত বলি নি। কিন্তু, ধর্ষণের মতো অভিযোগ যখন উঠেছে, তখন, ও কিছু নয়, অমন তো হতেই পারে, এভাবে দেখতেও আমি অভ্যস্ত নই।
তুমি কি ভাবে দেখবে, কোন্ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করবে, সে তো সবাই গ্রাহ্য করবে না। তারা তাদের গুরুদেবের পক্ষে দাঁড়াতে পারে। গণতান্ত্রিক দেশে সে অধিকার তাদের আছে। ভারিক্কি চালে বললেন অরুণ।
শ্যামলী বলল, দেখুন অরুণদা, ধর্ষণের মতো অভিযোগ সহসা আসে না। একটা মেয়ে কতখানি মরিয়া হয়ে উঠলে, এমন অভিযোগ আনে, আনতে পারে, এটা ভেবে দেখবেন। একটা চোর, ছিনতাই বাজ, ডাকাতের সাথে একটা ধর্ষককে গুলিয়ে ফেলবেন না। ধর্ষণের অভিযোগ যে মেয়েটা আনে, সে যে নিজেকে কতদূর বিপদের তলায় তলিয়ে দেয়, সেটাও তো ভেবে দেখবেন। ধর্ষিতা মেয়ের অগ্নিপরীক্ষা চেয়েছিলেন রামচন্দ্র। আসলে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন।
দ্যাখো শ্যামলী, ভুয়ো অভিযোগ, মিথ্যে অভিযোগ, একটা নিরীহ লোককে হয়রানি করার জন্য ষড়যন্ত্র করা, এগুলো কি এদেশে হয় না বলছ?
না অরুণদা। মিথ্যে অপবাদ দিতে আমরা জাত হিসেবে খুবই পছন্দ করি।
অরুণ বললেন, ধর্ষণের অভিযোগটা শুনেছি। আরো কি কি আছে। সবটা জানা যায়নি। আশ্রমের সবাই শোকে মুহ্যমান। টাকা তোলার জন্য ওঁরা হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তাহলে, তুমি ভেবে দ্যাখো, একটা লোককে বেকায়দায় ফেলার জন্যে কয়েকজন খারাপ লোক জোট বেঁধেছে বলেই আমাদের আপনজনকে খারাপ ভেবে নিতে পারি না।
শ্যামলী বলল, তা আপনি পুলিশের তরফে অভিযোগগুলো ঠিক ঠিক কি কি, সেটা খুব স্পষ্ট করে জানার জন্য আর কি কি চেষ্টা করেছেন?
অরুণ তেতো গলায় বললেন, দ্যাখো শ্যামলী, আমি ব্যস্ত লোক। অতো বড়ো একটা ব্র্যাঞ্চ চালাবার ভার আমার ওপরে। আমি আশ্রমের ম্যানেজারকে ক’বার ফোন করে পাইনি। বীরুকাকাও ফোন ধরে না। বেজে যায়। জানার সুযোগ হয় না।
আমি সেই রকমই ভেবেছিলাম অরুণদা।
ভারি আলতো দুষ্টু একটা হাসি খেলা করে শ্যামলীর মুখে।