• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৪৫)

পর্ব – ৪৫

৪৪
মেঝেতে আসন পেতে মা ও দিদির সাথে খেতে বসেছে শ্যামলী । তনুশ্রী বললো “রমানাথ ছেলেটাকে আমার একটুও পছন্দ হয় নি।“
মা জানতে চাইল “রমানাথ খারাপ কিসে?”
তনুশ্রী ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো “ কেন লক্ষ্য করো নি মা, এমন ভাবে আমাদের বাড়ির মেয়ের সাথে কথা বলছে, যেন কতদিনকার চেনা!
সবিতা বললো “ তা চেনা আর নয়! ওর বাবা যে দাদার গুরুভাই। গুরুভাই মানে তো নিকট আত্মীয় এক রকম।“
তনুশ্রী রেগে উঠে বললো “দ্যাখো পিসি, আমাদের মধ্যে যখন কথা হবে, তখন আর পাঁচজন কথা বলুক, সে আমি চাই না।“
সবিতা মাথা নিচু করে বসে রইল। তার চোখ দিয়ে বড়ো বড়ো ফোঁটায় টপ টপ করে জল পড়তে দেখে, শ্যামলী আর থাকতে না পেরে বলল “ দিদি, বাবা ওকে বোনের চোখে দেখে, সেটা তুমি ভালো করেই জানো। ও এ বাড়ির একজন সদস্য।“
পিসি কেঁদে উঠে বললো, “দোহাই তোদের, আমার ঘাট হয়েছে। তোরা বড়লোকের বউ, বড়লোকের মেয়ে। তোদের কথায় আমার থাকার কি অধিকার আছে।“ এই বলে সে নিজের গালে মুখে চড় মারতে লাগলো। শ্যামলী গিয়ে তাকে আটকালো। বললো “ দিদি, পাঁচজনের মধ্যে কথা বললে, সেই পাঁচজন কথা কয়ে ফেলতে পারে। এবার থেকে তোমার গুপ্তকথা তুমি আলাদা করে কোয়ো। তাহলে পাঁচজনে সে কথায় কান দেবে না।“
তনুশ্রী এবার মাকে ধমকে উঠে বললো “ আমি কি বললুম, তোমার কানে ঢুকেছে মা?”
বাসন্তীবালা নার্ভাস হয়ে বললেন, “সম্বন্ধটা তো তুইই এনেছিলি । এখন আবার তোর মত ঘুরে গেল?”
তনুশ্রী বললো “না, দেখছ না, বিয়ের আগেই কেমন শ্যামলীর হয়ে কথা বলছে রমানাথ। আচ্ছা বেহায়া পুরুষ তো? পুরুষ মানুষ গম্ভীর হবে। সর্বদা একটা ওজন রেখে, ভারিক্কী ভাব নিয়ে কথা বলবে, তাই জানি। রমানাথটা যেন ছ্যাবলাকান্ত ।“
বাসন্তীবালা অপ্রতিভ হয়ে বললেন, “কি জানি মা। এতদিন ছেলেটা এলে শ্যামলিমা কথা বলতে চাইত না। দোর আটকে বসে রইল একবার। এখন তুই আবার বেসুর গাইছিস। যার জিনিস সে সামলে চললে, তোর কিসের সমস্যা তনু?”
এমন সময় তনুর বর অরুণ এসে মুখ বাড়ালেন। বললেন, “ কি কথা হচ্ছে শুনতে পারি?”
শ্যামলী হেসে বললো, “আগে দিদির অনুমতি চেয়ে নিন ।”

“সে কি কথা শ্যামলী, কি এমন কথা বলছো তোমরা যে তোমার দিদির অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হবে?”
শ্যামলী বললো, ” মানে রমানাথবাবুর মূল্যায়ন করছিলেন কি না উনি। তো তাতে আপনার বাক স্বাধীনতা আছে কি না, সে তো আমার জানা নাই। ”
তনুশ্রী গর্জন করে “শ্যামলী বাজে বকবি না।“
তনুশ্রীর বিরক্তি গায়ে না মেখে শ্যামলী বলে, “না দিদি, বাজে বকবো না। অরুণদা যদি বুঝে সুঝে কথা না বলেন, মাঝ রাতে বেচারিকে তুমি কি শাস্তি দেবে আবার!”
তনুশ্রী রেগে উঠে বলে, “শ্যামলী, ফের অসভ্যতা করছিস?”
অরুণ অবাক হয়ে বলেন, “রমানাথের কী মূল্যায়ন করছিলে তুমি তনুশ্রী ?”
কড়া গলায়, প্রায় শাসনের সুরে তনুশ্রী অরুণকে বললো “যাও, এর মধ্যে তোমার আসার কোনো দরকার নেই। তুমি শিগগির শুয়ে পড়ো গে !”
চৌকাঠে দাঁড়িয়ে শ্যামলী বললো, “জামাইবাবু, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, রমানাথকে দিদির মোটেও পছন্দ হয় নি। দিদি কেবল আপনাকেই পছন্দ করে।”
অরুণ মজা করে বললেন, “সে তো আমার পক্ষে সুখের কথা শ্যামলী। এই বুড়ো বয়সে আমার বউ ইয়াং একটা ছেলের সঙ্গে পালালে আমি যে লোকসমাজে মুখ দেখাতে পারবো না। “
হিস হিস করে তনুশ্রী বললো “মাঝরাতে শালী ভগিনীপতিতে তোমরা কি শুরু করলে বলো তো?”
অরুণ বললেন, “আচ্ছা, লোকে তো শ্যালিকার সাথে এক আধটু রসের কথা বলেই থাকে। তুমি কি আমাদের মধ্যে ভাশুর ভাদ্দর বউয়ের সম্পর্ক চাইছ ?”
“একটা মানুষ হাজতে পচছে, তাকে নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। যতো ফালতু কথা বলতে লেগেছে!” তনুশ্রী কেন যেন ককিয়ে কেঁদে ওঠে । মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন অরুণ ।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।