• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২৯)

পর্ব – ২৯

১২৮
একটা হালকা রঙের সুতি শাড়ি পরে বারান্দায় বের হল শ্যামলী। সারাদিন কারখানার কাজ দেখাশুনা হয় নি। মনটা সেখানে পড়ে আছে। একটু বাদেই সূর্য ডুববে। পাখিরা ফিরবে ঘরে। এমন সময় আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে নিজের ঘর থেকে বের হল শান্তনু। বলল ” কি রে, তোকে না কি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছিল। ” নিজের মায়ের পেটের বোনকে পুলিশ টেনে নিয়ে গিয়েছিল, এ খবর পাবার পর তার যে বিশেষ কোনো হেলদোল হয়েছিল, তাকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। তবে, তার দিবানিদ্রাটি যে সরেস ভাবেই হয়েছে, তার আড়মোড়া ভাঙার বহরেই তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
শ্যামলী ম্লান হেসে বললো “দু চার মাস যে জেলের ভাত খাবো, সেই সৌভাগ্য আমার নেই রে দাদা। তিমি তিমিঙ্গিলরা কখনো কখনো ভুল করে ভাঙাচোরা জাহাজের কাঠ কুটরো গিলে ফেলে। বিস্বাদ বিচ্ছিরি জিনিস টের পাওয়া মাত্র তা উগরে ফেলে দেয়। ”
“হুঁ, নিজেকে জাহাজ ভাবছিস ! তা ভালো। সেই আনন্দেই থাক।” বলে সে বেশ একটু মনঃ ক্ষুণ্ণ হয়েই আবার নিজের ঘরে ঢুকে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে, মা ডেকে বলল, “চা করছি, খেয়ে যাবি।” শ্যামলী আপত্তি করলো না।
বাবার ঘরে জাপানি টি পট নিয়ে মা চা বানাচ্ছে দেখে সে অবাক হয়ে গেল। তার অবাক হওয়া টের পেয়ে মা বলল “এটা তোর প্রাইজ পাওয়া জিনিস। তোর কত যে প্রাইজ এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে এ বাড়িতে !”
শ্যামলী অবাক হয়ে গেল। মা ঠিক খেয়াল রাখে তার প্রাইজ গুলোর।
মাকে বলল “জানো মা, জাপানিরা একসাথে চা খাওয়াকে একটা ধর্মপালনের মতো মনে করে। একটা পবিত্র সামাজিকতা। ”
মা বলল “দাদাকে চা দিয়ে আয়।” নীরবে উঠে গেল শ্যামলী। দাদার ঘরে ঢুকে আধশোয়া দাদাকে ডেকে চা দিতে শান্তনু অবাক হয়ে গেল। দাদাকে সে বলল “বাবার ঘরে একসাথে চা খাচ্ছি। তুই আসবি ?”
শান্তনু কি ভেবে বলল ” ন্না। ”
সেখান থেকে ফিরে বাবার ঘরে এসে বেতের চেয়ারে বসলো শ্যামলী। আয়নার দিকে মুখ করে বসেছে সে। খোলা জানালা দিয়ে বিকেলের মিঠে আলোয় ঘর ভরে গিয়েছে। জানালার বাইরের জগৎ, আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে, ঘরের পরিসরটি যেন বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘরটা সত্যি অত বড় নয়। খুব বড় ঘরে সংসারী মানুষ ঘরোয়া কাজ করতেও সমস্যায় পড়ে। তবু কোনো কোনো বিকেল থাকে, আমাদের কোটর গুলিতে আলো ঢেলে দিয়ে তাকে আশ্চর্য রকম বড় করে দেয়। এমন সময় ভাল ভাল বই ভর্তি একটি সুদৃশ্য আলমারি ও রম্যা রলার একটি বইয়ের ছবি ভেসে উঠলো তার মনে। তার সাথে একটি বেশ ভদ্র ও মার্জিত মনের পুলিশ অফিসার এর ছবিও উঁকি দিয়ে গেল।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।