গল্পে শর্মিষ্ঠা সেন
সুধারাণীর সম্পদ
সুধারাণীর দমকে দমকে কান্না উঠছে অথচ ছেলে বউ, নাতি নাতবউ এবং ঘর ভরা পুতির ভীড়ে শান্তিতে একফোঁটা চোখের জল ফেলার জায়গাটুকু নেই ৷ বছর বিউনি সুধারাণীর পাঁচটি ছেলে তিনটি মেয়ে ৷ মেয়েগুলির কাছেপিঠেই বিয়ে দিয়েছেন ৷ পাঁচ ছেলেই বিবাহিত তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে বিশাল একান্নবর্তী পরিবার ৷ নাতি পুতির সবার নাম এখন আর মনে করতে পারেন না ৷ কোনটি কার ঘরের তাও খেয়াল থাকে না ৷ তবুও এতকাল সুখ ছিল , মানুষের ওমে থাকার ভাগ্য সকলের হয়না ৷অথচ আজ হাতের লাঠিটি জোগাড় করে সুধারাণী কাঁপতে কাঁপতে আড়াল খোঁজেন৷
গতকাল ছোটছেলে নদীরাম সপরিবার অন্যত্র পাড়ি দিয়েছে ৷ পরিবার বলতে নদীরামের বউ জোছনা আর ছেলে৷ জোছনাকে এককালে কোলেপিঠে করে বড় করেছিলেন সুধারাণী ৷ ভারী ন্যাওটা ছিল পড়শি নবীন সামন্তের মেয়েটি ৷ নদীরামের সাথে বিয়ে দিয়ে শান্তি পেয়েছিলেন , হাতজোড় করে ভগবান আর নিজের স্বামীর মুখখানা স্মরণ করেছিলেন ৷ সেই সুখ কপালে সইল না, নদীরাম নিঃশব্দে বউ ছেলে নিয়ে সংসার থেকে আলাদা হয়ে চলে গেল ৷
পুকুর পাড়ে খড়ের পালা , তারই নীচে তিনমাথা এক করে বসে সুধারাণী আকাশ পাতাল ভাবছিলেন ৷ নাতবউ খুঁজে খুঁজে ঠাকুমা শাশুড়ি কে পেয়ে ডাকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়, ঠাকুমার চোখের জল আর বিলাপ শুনে৷
“ঠাকুমা, কান্দেন ক্যান ? ছোটকাকা চইলে আসবেন,নিজেগো ঘর বাড়ি, জমি জিরেত ছাইড়্যা থাকপার পারলে সেনা ! রাগ কইরা গেছেন, আইয়া পড়বেন ৷”