বাতাসের ভাষা বদল হচ্ছে, প্রত্যকেরই জানি
মাতৃ ভাষা থাকে, বাতাসে সেই মৌখিক ভাষা
সহসা নীল বর্ণের মতো-মৃত্যু বর্ণের মতো
আমাদের দিকে ছুটে আসছে।
মাঝে মাঝে শূন্যতার রং ছড়িয়ে পড়ছে
এই চেনা পৃথিবীতে।
চেনা মুখ বদলে যাচ্ছে। রোদ্দুরের রং
সকালে নরম ছিল, অতঃপর রোষানলে
তন্বী দুপুর, বিকেলে ক্রমশ বদলে গিয়ে
সহজ সরল
যেদিকে তাকাই আলোকিত ত্রিভুবন
এক আনন্দ থেকে অন্য আনন্দের ভিতর
ঢুকে যাচ্ছে কেউ;
অন্য কেউ চিরাচরিত গাছের
মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে আলোকিত অন্ধকারে
এক মুঠো ধুলো উড়ে চল্লো মহাকাশে, সমস্ত
সীমাবদ্ধতার ওপারে, বোবা ও নিঃসঙ্গ…
২।
জলে বিকেলের আলো এসে পড়েছে
দিনের শেষ আলোয় হাসেরা ডানা ঝাড়ে
এ ঘাটে কদাচিৎ কেউ আসে
বলা ভালো, এ ঘাটে নীরবতা নামক
শব্দেরা উবু হয়ে বসে থাকে
রহস্যময় ঐ ম্লান আলোয় কে যেন
জলে নামে, ডুব দেয়, জল ছিটায়
চিৎ সাঁতারে।
সন্ধ্যা আলতির ঝোপের পাশে, আকন্দ
গাছের আড়ালে, আজ সন্ধ্যায় তাঁকে দেখলাম;
নিঝুম বসে আছেন নদী পাড়ে
প্রাণপনে ডাকলাম, উত্তর পেলাম না
জল কাদা মাড়িয়ে উনি এদিকেই আসছেন
চোখে ভয় বাহ্যত ভাবলেশহীন…
৩।
জলও তৃষ্ণা চিরদিন
পাশাপাশি;
দেখা হয় কথা হয়না কোনো-
উভয়েই নির্বাক, নিশ্চুপ
ঘোলাটে সম্পর্কের চোরাটানে চিরদিন
অস্থির…
ট্রেন এসে থামতেই
তৃষ্ণা ও জল
নিজ নিজ স্টেশনে নেমে গেল
মাঝরাতে একপাত্র জল অতি সন্তর্পণে
মশারির ভিতর এসে ঢুকে পড়েছিল;
তৃষ্ণারও নাকি চমৎকার এক ঋতুজলের
তেষ্টা পেয়েছিল—
চাঁদ সাক্ষী সেই রাতে …
৪।
রাত বাড়ছে, শীত নামছে শহরের প্রতিটি
মহল্লা জুড়ে
দরজা জানালা বন্ধ করে পৃথিবীকে ঘরের
বাইরে রেখে আমরা ঢুকে পড়েছিলাম
নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে
চারিদিকে নিস্তব্ধ
আমরাও ঢুকে যাচ্ছিলাম এক নীরবতা থেকে
অন্য এক নীরবতার ভিতরে। দিনান্তে রোদ নিভে গেলে
আপন অভ্যন্তরে শুরু হয়েছিল অনন্য কথকতা
সেই মুহূর্তে আমরা কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না
সব কিছুই অস্পষ্ট, অবয়বহীন
পুরনো বাড়ির ভগ্নপ্রায় সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছিলাম
আমরা — নিশ্চুপ, নীরব
যেতে যেতে কেবলই মনে হচ্ছিল, পিছনে ফেলে এলাম
আমাদের ব্যবহৃত যাবতীয় শীতের দস্তানা—–
টুপি ও ট্রাউজার ।
পথে প্রবাসে
গতরাতে ধান খেতের পাশে রাইনে মারিয়া রিলকের সাথে
দেখা হল। দু’দণ্ড কথা হতেই ঘনিষ্ঠতা, হাতে স্বরচিত
কবিতা। পরিচয়ের পর্বে বিনম্র কবি জানালেন, তার পরিচয়
কবিতা ফেরিওলা—এভাবেই শুরু। তারপর দীর্ঘ পথ
পেরিয়ে গেলাম তিমি বদলে নিচ্ছেন নিজেকে। আর
রূপ ও ঐশ্বর্যের
চুড়ায় বসে ধ্যানমগ্ন রিলকে এখন দৈব প্রেরণার জন্য অপেক্ষারত
আমরা সদলে রাশিয়ায় চলেছি—তারপর প্যারিস, প্যারিস থেকে
সুইজারল্যান্ড। সেখানেই একটি অভিজাত সেতু…এখানে
দুদণ্ড বসলাম —– আমার অনুরধে রিলকে তাঁর ‘পাথরের সেতু’
কবিতাটি পাঠ করলেন।
আহা! কি অপূর্ব!
তাঁর কণ্ঠ স্বরে ঝরে পড়ছিল অমৃত… দৈব বানী আর কাকে বলে!
পাথরের সেতুর উপর ওই অন্ধ মানুষটির কথা
চিরদিন মনে থাকবে।
তারপর দিনের আলোয় রাতের দৃশ্যাবলী সব ডুবে গেল…
এই মুহূর্তে কিছু দেখা যাচ্ছে না।