গুচ্ছকবিতায় তুলসীদাস ভট্টাচার্য

এক টুকরো আকাশ

আমি মেঘ এনেছি উঠান জুড়ে
শ্রাবণ ধারায় ভেজাবো বলে ।
দীঘির কাজল কালো জলে
লাল শালুকের ঘ্রান,খেজুরের ছায়া।
বৃষ্টির ফোঁটা পেয়ে ঢেউ তোলে চিতল,কই।
বৃষ্টিভেজা সোঁদা মাটির একর জুড়ে
কোজাগরীর পায়ের ছাপে জমেছে জল।
মনের বিকেলে ছড়িয়ে দিয়েছি মিহি রোদ
দিগন্তের রাঙা ঠোঁটে চুমু দিয়ে এঁকেছি
এক টুকরো আকাশ ।

সরোবর

ঈর্ষাকাতর মুখগুলি দেখে বিস্মিত হই না আর/
বরং করুণার স্বচ্ছ জলে তাদের ভিজিয়ে দিই ।/
অসহিষ্ণুু দ্রাঘিমার পার্থক্যে ধরা পড়ে সময়ের গরমিল/
গোপন হিংসা টেনে নিয়ে যায় খাদের কিনারে ।/
যে জলে পড়ে না কোন প্রতিবিম্ব
নেই পানকৌড়ি ও শাপলার লুকোচুরি।
যেখানে নেই ভেজা পালক থেকে জল ঝরে পড়ার দৃশ্য/
তাকে সরোবর হিসাবে কল্পনা না করাই ভাল।/

সময়ান্তর

ঘুঁটি সাজিয়ে বসে আছি
অথচ খেলার কেউ নেই ।
বাঘবন্দী বা লাউ কাটাকাটি
কোনটাতেই নেই কারো আগ্রহ ।
এক্কা-দোক্কা থেকে সরে এসেছে
পাছা ফাটা জিন্ স ।
বিকেল বলে কিছু নেই
একটা কোল বালিশের কাছে
জমা থাকে সারারাতের কার্বন কপি।
সূর্য স্থির । আমরা দেখি দিন-রাত্রি
জোয়ার-ভাটা ,উপবৃত্তাকার কক্ষপথ।

আদিরূপ 

যদি কাছে আসতে না পারবে
তাহলে এমন করে আসো কেন!
চোখের ইশারায় কেন ডাকো!
বেশ তো ছিলাম ।
বইয়ের খাঁজে ময়ূরের পালক রেখে
বেশ তো চলে যাচ্ছিল ছাতাপড়া জীবন।
কোন বাজি তো ধরিনি যে
চোখেই আঁকতে হবে রামধনু ।
গাছের পাতারা জানে
রাতের শিশির জানে
ভোরের শুকতারা জানে
ভাবনার রঙে বাস্তবতাই
আমাকে সিঁড়ি ভাঙার অংক শেখায়
হাত ধরে পার করিয়ে দেয় ভাঙা সেতু।
যামিনী রায়ের তুলিতে খুঁজি
বাংলা মায়ের আদিরূপ ।

রূপকথা

কোনদিন ছুঁতে পারবো না জেনেও
আমরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি।
রূপালী শরীরে জোয়ার এলে
ভাটার কথাও মনে রাখতে হয়।
দূর থেকেই চাঁদ সুন্দর
কাছে গেলেই খানাখন্দে ভরতি
একটি উপগ্রহ যার নিজস্ব আলো নেই।
শিশু ভোলানো চাঁদের রূপকথা
ঝলসানো পাহাড় ছাড়া কিছু নয়।
তবুও কিসের টানে বারবার
ছুটে যাওয়া চাঁদের আলোয়
যার অনুর্বর জমিতে লাঙলের দাগ নেই
সবুজ ঘাসের আলপথ নেই !
মায়াবী মাটিতে আমরা বীজ বুনি
যেখানে অঙ্কুরোদ্গমের মাটি নেই ।
চরকাটানা বুড়ি হিসেবে আজও
শিফন সুতোয় জড়িয়ে রাখি পৃথিবী ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।