• Uncategorized
  • 0

গান্ধি ১৫০ : জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

গান্ধিজিকে “মহাত্মা” বলে সম্মান দিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাধারণ মানুষের উপর শাসকের অত্যাচার প্রতিরোধ করতে দক্ষিণ আফ্রিকায় তরুণ ব্যারিস্টার মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধি এক নতুন ধরণের আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সে আন্দোলনের বার্তা সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের বোধের দুয়ারে পৌঁছেছিল। ভারতেও নানা প্রকার আন্দোলন চলছিল। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কংগ্রেস। স্কট সিভিলিয়ান অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম ছিলেন তার উদগাতা। আর উমেশচন্দ্র বনার্জি ছিলেন প্রথম সভাপতি। আবেদন নিবেদনের সুরে হলেও সারা ভারতে নির্মম শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে কিছু কথা তুলে ধরত কংগ্রেস। এমন সভায় যাঁরা নেতৃত্ব দিতেন, তাঁদের শ্রেণীগত একটা অবস্থান ছিল। সংগত কারণেই ভারতীয় মানুষের মধ্যে আর্থিক সমৃদ্ধির প্রশ্নে স্তরবিন্যাস ছিল। আর যিনি যে স্তরে ছিলেন, তিনি কংগ্রেসের গতিমুখ সেদিকে টানতে চাইতেন। রবীন্দ্রনাথ জাতীয় কংগ্রেসের সভায় গিয়েছিলেন যৌবনেই। সেখানে ভারতীয়দের সমৃদ্ধিশালী অংশের স্বাধীনতা চাইবার রকম সকম তাঁকে মনোবেদনা দিয়েছিল। কংগ্রেসের মধ্যে দুটি স্পষ্ট ধারা ছিল। নরমপন্থী ও চরমপন্থী। দুই দলে যথেষ্ট দড়ি টানাটানি ছিল। স্বাধীনতার মাত্রা নিয়ে মৌলিক মতভেদ ছিল। মাঝেমধ্যে কংগ্রেসি আন্দোলনে ভাঁটার টান পড়ত। তখন হতাশ মধ্যবিত্ত মানুষের ঘর থেকে উগ্রপন্থী মতবাদ মাথা চাড়া দিত।উগ্রপন্থীরা স্বপ্ন দেখতেন বোমা মেরে, রাতের অন্ধকারে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর লুঠ করে আর গুলি চালিয়ে ব্যক্তিহত্যার পথে ভারত স্বাধীন হবে। এঁদের নানা গ্রুপ ছিল। গ্রুপগুলিতে অন্তঃকলহ ছিল। বিশ্বাসঘাতকতাও ছিল। এলোমেলো অসংযত ভাবে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ছিল।কিন্তু নরমপন্থী, চরমপন্থী বা উগ্রপন্থী, কেউই কিন্তু একেবারে নিচের তলার মানুষকে ভারতের স্বাধীনতার কাজে সামিল করতে পারেন নি। তাঁদের সেই প্রতিভাটাই ছিল না। গান্ধি ছিলেন সেই মানুষ, যিনি স্বাধীনতাকে অতি সাধারণের কাছে বোধগম্য করে তুললেন। তাঁর জীবনধারায় অতি সাধারণ ভারতীয় আস্থা বোধ করতো। সত্যাগ্রহ, অহিংস অসহযোগকে অস্ত্র বানিয়ে গান্ধি যে আন্দোলন গড়লেন, সেটা সারা ভারতে জনজাগরণ ঘটিয়ে দিল। লোক খেপানো নয়, লোককে জাগানোর এই গান্ধিচর্চিত পথ রবীন্দ্রনাথের নজর কেড়েছিল। নিজের নানা রচনায় মানুষকে সাথে নিয়ে অহিংস পথে আন্দোলন গড়ে তোলায় রবীন্দ্রনাথ আগ্রহ দেখিয়েছেন। ব্যক্তিহত্যা, ব্যক্তিসন্ত্রাস নয়, মানুষের সচেতন সংঘশক্তিকে প্রতিরোধের ঢাল বানাতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সত্যাগ্রহ আর অহিংস অসহযোগের রাস্তা কবির শ্রদ্ধা কুড়িয়ে নিয়েছে। রক্তকরবীর নন্দিনী, ফাল্গুনী নাটকের ধনঞ্জয় বৈরাগী অচলায়তন নাটকের পঞ্চক, মুক্তধারার অভিজিৎ, সকলেই যেন নির্ভীক ভাবে প্রতিবাদ করেছে কিন্তু সন্ত্রাসের পথকে প্রশ্রয় দেয় নি। রাশিয়ার চিঠিতে রাশিয়ান বিপ্লবীদের বিস্তর গুণ লক্ষ্য করেও কিছু মৌলিক ত্রুটি উল্লেখ করেছেন কবি। সে জিনিস পরে সত্য প্রতিভাত হয়েছে। মহাত্মারও কিছু কিছু ভুলকে স্পষ্ট ভাবে সমালোচনা করলেও, অন্তরে অন্তরে কবি ছিলেন মহাত্মার মত ও পথের একান্ত অনুরাগী।

লিখেছেন – মৃদুল শ্রীমানী।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।