এখন আমরা সবাই বিচলিত একদিকে করোনা অন্যদিকে আম্ফানের মত একটি ঝড় এসে গোটা পশ্চিমবঙ্গ কে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। সে যতো যাই হোক না কেন আমরা তো মানুষ তাই পেট তো মানে না খেতে আমাদের হবেই। তাই ব্যানার্জি পাড়ার মানস বাবু রোজই সকালে বাজারে যায়। সকালে চা খেয়ে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে গুটিগুটি পায়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।আর এখন করোনার প্রকোপ চলছে বলে তার প্রস্তুতি তিনি নিয়েই বেরোন,হাতে গ্লাভস মুখে মাক্স আর সাথে স্যানিটাইজার নিয়ে। মানষ বাবু কিছুদিন হলো সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। ওনার রোজ রোজ বাজারে যেতে যেতে সব সবজি বিক্রেতার মুখ চেনা হয়ে গেছে। বহু সবজি বিক্রেতার মধ্যে একজন দেহাতী মহিলা বসেন। কিন্তু মানষ বাবু দুদিন হল লক্ষ করছেন ওই দেহাতি মহিলা সবজি তরিতরকারি ছেড়ে ফল বিক্রি করছে।মানষ বাবুর মনে প্রশ্ন আসে এই মহিলা তো দীর্ঘদিন ধরেই সবজি বিক্রি করছে কিন্তু কেন এখন ফল? নিজের মনের সংশয় দূর করবার জন্য মানষ বাবু বাজার শেষে ফল কেনার জন্য ওই মহিলার সামনে এসে দাঁড়ালেন। মহিলাটি প্রায় বছর ৬৫’র হবে। আচ্ছা মাসি তুমি না তরকারি বিক্রি করতে? তা এখন ফল নিয়ে কেন। দেহাতি ওই মহিলা পরিষ্কার বাংলা না বলতে পারলেও ভালোই বাংলা বলেন।
আরে বাবু আমার তো তরকারির ব্যবসা তো আছেই, ওই তো দেখছেন না আমার পাশেই তো ও আমার ভাই।এই যে করোনা অসুখ এসেছে তারপর আম্ফান ঝড় এলো এতে করে ভাইয়ের চাকরিটা চলে গেছে। ওর চার চারটি ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার ও বেচারা খাবে কি। ও তো বাবু আপনাদের মত সরকারি চাকরি করে না। ও একটা সামান্য রংয়ের কারখানায় চাকরি করতো তাই আমি ওকে আমার সবজির ব্যবসা টা দিয়ে দিয়েছি। আমি ফল নিয়ে বসছি। মানস বাবু দারুণ তো মাসি তুমি! এখন সচরআচর এমনটা দেখা যায় না। দেখা না গেলে কি হবে আমি তো একটা মানুষ, এই ফল বিক্রি করে যে টাকা পাব তাতে একটা পেট চলে যাবে। ওরতো চার-চারটে পেট এই সামান্য ফল বিক্রি করে কি চলবে? মানস বাবুর আর একটু জানবার ইচ্ছে হলো, তা মাসি তুমি কি ভাইয়ের সাথেই থাকো। না না বাবু,আমি একাই থাকি। ভাইয়ের বউ আছে ওর আলাদা সংসার আছে সেখানে কেন যাবো। কেন ওদের মধ্যে ঝামেলা বাধাতে যাবো। মানস বাবু এইসব কথা শুনে অবাক, মাসি তোমার এই সুন্দর একটা মানসিকতা দেখে আমার বেশ লাগলো। এমন মানসিকতার মানুষ এখন খুব একটা দেখা যায় না!