“ওই-ওই বাঁ দিকের আগাছাগুলো সাফ করে দিয়ো আব্দুল ! বর্ষায় সাপ-খোপের আড্ডাখানা হবে !” বারান্দা থেকে কথাগুলো বললেন আরতীদেবী । যাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সেই আব্দুল মণ্ডল এই পাড়ায় ফুরানের কাজ করে বাড়ি-বাড়ি । আরতীদেবীর উঠোনে দু’কাঠা মতো জমি আছে, প্রতি বর্ষায় সেগুলো আগাছাতে ভর্তি হয়ে যায়, তাই আগে-ভাগেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন !
বউমা সুমিত্রা এতক্ষণ রান্নাঘরে খুন্তি নাড়ছিল, আরতীদেবীর গলার আওয়াজ শুনে শাশুড়ির কাছে এসে নীচুস্বরে বলল, “তুলসিমঞ্চের পাশেও যে জঙ্গল হয়েছে, ওইগুলোও পরিষ্কার করিয়ে নেবেন তো ?”
বউমার কথায় চমকে উঠে আরতীদেবী বললেন, “খেপেছ নাকি ! জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে যদি আমার তুলসীমঞ্চ ছুঁয়ে ফেলে ! ও জঙ্গল অন্য লোক দিয়ে সাফ করাব, আব্দুল কে দিয়ে নয় !”
পাশের ঘরে তাঁর দশ বছরের নাতনী মিঠু দুলে-দুলে পড়তে লাগল, “মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম…” কালকে স্কুলে পড়া ধরবে যে !
· * * * * * * *
“তাড়াতাড়ি চালাও !” টোটোওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বললেন আরতীদেবী ! মনের মধ্যে নানা কুচিন্তার বিস্ফোরণ হচ্ছে ! তিনি মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলেন !
আজ স্কুল থেকে বেরনোর সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে মিঠুর বড় একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়ে গেছে! মাথায় চোট লেগে রক্ত বেরিয়েছিল, সাথে-সাথে তাকে কাছাকাছির নারসিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে ! খবরটা পাওয়ার পর আরতীদেবী আর থাকতে পারেন নি, পাশের বাড়ির বল্টুকে নিয়ে নার্সিংহোমে ছুটেছেন !
নার্সিংহোমে পৌঁছে দেখলেন তাঁর ছেলে ময়ূখ অস্থির হয়ে পায়চারি করছে, বউমা বসে আছে বিধস্থ হয়ে ! ময়ূখের শালা সঞ্জয়ও এসছে, আরতীদেবী তার কাছে ছুটে গিয়ে বললেন, “কি হয়েছে মিঠুর ?”
সঞ্জয় জবাব দিলো, “মাথার চোট গুরুতর, অপরেশন করতে হবে ! কিন্তু তার জন্য ও নেগেটিভ ব্লাড লাগবে- মিঠুর যা ব্লাড গ্রুপ, এবং সেটা খুবই রেয়ার ! আমাদের কারোর রক্তে হবেনা, ডাক্তার রেকর্ড চেক করতে গেছে, এ অঞ্চলে কার ও নেগেটিভ ব্লাড আছে !”
খানিকক্ষণ বাদে ডাক্তারবাবু এসে বললেন,” ও নেগেটিভ ডোনার পাওয়া গেছে, তার নাম আব্দুল মণ্ডল, এখানকারই বাসিন্দা, তার রক্ত যদি নেওয়া যায়-“
আরতী দেবী সাথে-সাথে বললেন, “হ্যাঁ-হ্যাঁ, এখুনি ব্যবস্থা ক্রুন, আর দেরী করবেন না !”