ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে খাবার জমানো টাকা ও।ম্লান হয়ে আসছে বউয়ের মুখের হাসি।ছয় মাসের বিয়ে,তাও আবার প্রেম করে।ওর বাবার ছিল তীব্র আপত্তি ।ছোটো একটা বইয়ের দোকানের কাজের উপর ভিত্তি করে, সহজ ছিল না প্রেম করে বিয়ে করা।
তার ওপর স্কলার পাওয়া স্নাতকা মেয়ে।বইয়ের দোকানে কাজ করলেও ,শিক্ষা গত যোগ্যতা যা ছিল, ভরসা ছিল সরকারী কিছু একটা জুটে যাবে।এই ভরসা টা ছিল স্নিগ্ধার ও।দুজনেই চেষ্টা করছিল ভালো কিছু একটা জোটানোর।এই তো একমাস আগেও ওরা স্বপ্ন দেখেছে অন্তত কারো একটা প্রাইমারি স্কুলের চাকরী জুটে যাবে।স্নিগ্ধার বাবা এখন উঠতে বসতে খোঁটা দেয় ব্যাংক ম্যানেজার ছেলেটা কে বিয়ে না করার জন্য।তাই অভাব কে কখনোই সেয়ার করতে পারবেনা স্নিগ্ধা।অভিষেক এর ও একই অবস্থা।দাদা বলেছিল আরো দুই বছর পরে বিয়ে করতে ।26 বছর বয়স অভিষেকের।দাদার বয়স 34 ।দাদা বিয়ে করেছিল 30 বছরে।28 বছর বয়সেই রেভিনিউ অফিসার হয়ে ছিল সে ।বৌদিমনি ও কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ভূগোল শিক্ষিকা।ওরা এখন কাছেই 2400 স্কোয়ার ফুট একটা ফ্ল্যাটে থাকে।দুই বছর আগেই ওদের দেড় কাটা জমির উপর পুরাতন দোতলা বাড়ি টা ছেড়ে চলে গেছে অভিষেকের দাদা।
বাবার মৃত্যু মনে পড়ে না।বাবাও ছিল সরকারি চাকুরে।মায়ের পেনশন ও বাবার রেখে যাওয়া জমানো টাকার সামান্য সুদের টাকায় বেড়ে ওঠা।মা ও গত হয়েছে এক বছর হলো।পেনশনের সাপোর্ট ও বন্ধ হয়ে গেছে।
আর জমানো টাকা থেকে আশি হাজার টাকা মাত্র ভাগে পেয়েছিল অভি।সিদ্ধান্ত টা অভির দাদার ই ছিল।বাড়ি টা যেহেতু অভির দখলে ।তাই জমানো টাকার বেশি অংশই নিয়ে ছিল দাদা।কোনো আপত্তি ছিল না অভির।টাকা পয়সার ব্যাপারে বরাবরি উদাসীন ছিল অভি।তাই আশি হাজার টাকা থেকেই বিয়েতে খরচ করতে হয়েছিল অভিকে।কোনো মত না থাকায় দাদার থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাইনি অভি।
দশ হাজার টাকার মাস মাহিনা তে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে দিব্যি কেটে যাচ্ছিলো দুজনার।কোন এক অজানা
জীবাণু এসে ছার খার করে দিলো সব।নেমে এলো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ।
সমাজের চোখে যথেষ্ট অবস্থাপন্য পরিবার বলে চিহ্নিত ছিল ওরা।তাই পাড়ার কাউন্সিলর যখন বাড়িতে বাড়িতে গরিব দের জন্য ত্রাণ দিচ্ছিল অভির থেকেও আবদার করেছিল পাঁচ শত টাকার।লজ্জায় না করতে পারি নি সে।
বই পাড়া সম্পূর্ণ বন্ধ।মালিক অতনু দা বলে দিয়েছে আর টানা সম্ভব নয়।
কখনো কর্মচারীর মতো দেখতো না অভিকে।নিজের পরিবার কেই আর টানতে পারছে না সে।যদি লোকডাউনের সময় সীমা আরো বাড়ে তাহলে বউয়ের হার টা পাড়ার রবীন স্যাকরা কে দিয়ে কিছু টাকা নেবে সে।রবীন কাকা কে আগে ভাগে বলে রেখেছে সে।
সম্প্রতি ব্রেকফাস্ট ,বিকালের টিফিন বন্ধ করে দিয়েছে অভিষেকরা।অবশিষ্ট শেষ ত্রিশ হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা বার করতে হয়েছে তাদের।সেখান থেকেই চলছে চাল,সব্জি বাজার।না কোন বীমা নেই ওদের।হঠাৎ বড় কিছু শারীরিক সমস্যা হলে ওই সাতাশ হাজার ভরসা।শুনছি ধীরে ধীরে আরো তিন মাস ঠেলে নিয়ে যাবে সরকার।
সবসময় দুই জন মিলে বিপদ মুক্তির পথ খুঁজে চলেছে।টিভি খুললে ই ঘন ঘন সরকারী বিজ্ঞাপনের ঝলক।আশ্বাস এর পর আশ্বাস।কোনো সমস্যা হবে না।ঝড় থেমে যাবে।মানুষের কোনো সমস্যা হবে না ।ঠিক বেঁচে থাকবে সবাই।ছয় মাস আরামে চলে যাবে দেশের সঞ্চিত খাদ্যভান্ডার থেকে।
কিন্তু অভিদের কি হবে?কি করে চলবে সংসার?কে বুঝবে ওদের?
পারবে কি টিকে থাকতে ওরা?অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে হেরে যাবে না তো ওরা? করুণা নিয়ে বাঁচতে চায় না ওরা। স্নিগ্ধার ও তাই মত।খোঁজ ও নিচ্ছে না ওদের কেউ।না পরিবারের অন্য সদস্য,না সমাজ।
একেই বলে হয়তো মধ্যবিত্ত।তবুও একরাশ স্বপ্ন ,ওদের বাঁচিয়ে রেখেছে ।
জানি ঝড় থেমে যাবে ।কিন্তু কবে?অভি ,অভিদের মতো যারা ধুঁকছে আবার তারা কি পাবে বাঁচার দিশা?
তাই তো অভিরা বলছে “আমার মতো যারা সংকটের মধ্যে আছো ,এসো চিৎকার করে হালকা হই,আমরা ও বাঁচতে চাই…..সম্মানের সাথে…..
আমাদের জন্য কি কেউ ভাবছো?
জবাব চাই ই…….
নাহলে বিষ চাই ই ………..
বিষ……………..”