• Uncategorized
  • 0

গদ্যে বিপুল দাস

গোময় ভারত প্রাঃ লিঃ 

ভোলানাথবাবুর মেজাজটা ছানাকাটা দুধের মত আধ-খ্যাচড়া হয়ে রয়েছে। দু’হাত দিয়ে কপালের দু’পাশে চেপে ধরে বসে ছিলেন। একটু আরাম লাগছিল। কাল রাতে পান-ভোজন একটু বাড়াবাড়ি রকমের হওয়ায় এখন হ্যাং-ওভার চলছে। সকালে পারুকে বলেছিলেন এক কাপ লাল চা দিতে। দেবী এমন মুখঝামটা মেরেছে যে, দ্বিতীয়বার বলার সাহস তার আর নেই।
বর্ষা সদ্য বিদায় হয়েছে। আকাশে ছেঁড়া-ছেঁড়া সাদা মেঘ ভো-কাটা ঘুড়ির মত ইতিউতি লাট খাচ্ছে। ফাঁকফোঁকর দিয়ে যতটুকু আকাশ দেখা যাচ্ছে, ঘন নীল। কোথাও মনে হচ্ছে শিউলি ফুটেছে। গন্ধে বাতাস ম’ম। ভোলাবাবু একটা সিগারেটের ভেতর থেকে তামাক ফেলে দিয়ে গঞ্জিকা-চূর্ণ ভরতে লাগলেন। দেখা যাক, এতে হ্যাং-ওভার কিছুটা নামে কিনা।
ভোলানাথবাবুর দুশ্চিন্তার কারণ আছে। প্রতি বছরের এ সময়ে, অর্থাৎ বাদলধারা সারার বেলায় তার শরীরটা কেমন কাহিল হয়ে পড়ে। মনে হয় ব্লাড-প্রেশার, শুগার, কোলেস্টেরল – সবই চড়চড় করে বেড়ে যাচ্ছে। পারুকে বলে লাভ নেই। গলা সপ্তমে চড়িয়ে তাকে জ্ঞান দিতে শুরু করবে। তার নাকি খাওয়াদাওয়ার কন্ট্রোল নেই, নেশাভাং-এ দিগ্বিদিক জ্ঞান নেই। সুতরাং অশ্বিনী ডাক্তারকে গুলে খাওয়ালেও কোনও লাভ হবে না। একটু আধটু নেশাভাং-এ তার যে কিছুই হয় না, এ কথা পারুকে অনেকবার বলেছেন, সে বিশ্বাসই করতে চায় না। আসলে সমুদ্র-মন্থনের পর অতটা হলাহল একবারে মেরে দেওয়ার ফলে তার ইমিউনিটি এমন বেড়ে গেছে যে, এখন সামান্য সোমরস বা গাঁজাভাং-এ তার কিছুই হয় না। তবে হ্যাঁ, কাল রাতে একটু বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে গেছে।
আসলে প্রত্যেক বছর এ সময়ে তার যত দুশ্চিন্তার মূলে যে পার্বতী, সে কথা বলার সাহস তার নেই। হতে পারে তিনি দেবাদিদেব, কিন্তু তাকেও মাঝে মাঝে অনেক কেস চেপে যেতে হয়। কারই বা ফালতু অশান্তি ভালো লাগে। আর একটা অনর্থ বাঁধাবে পারু। ‘গোপনে নেশা ছাড়ান’ বিষয়ে সুলুক জানতে গতমাসে তাকে লুকিয়ে নন্দীকে শহরে পাঠিয়েছিল পারু। বিজ্ঞাপনটা তিনিও দেখেছেন। আজকাল বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ কর্মসূচীতে এই দুর্গম কৈলাস পর্যন্ত হানা দিয়েছে। দেশিবিদেশি কোম্পানি তাদের নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছে। এখানেও পৌঁছে গেছে। মোড়ের মাথায় একটা দেবদারু গাছে ফ্লেক্স সাঁটিয়ে দিয়ে গেছে। কোথাও হেকিমের ছবিওয়ালা বিজ্ঞাপন, কোথাও ‘সফটওয়ার প্রোগ্রাম শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ান’, কোথাও ‘অ্যাডমিশন চলিতেছে, আসন সীমিত’। এসব দেখেশুনে তার মেজাজ বিগড়ে ছিল। ভৃঙ্গীকে বলে দিয়েছেন নতুন লোক দেখলেই ধরে আনতে।
ভোলাবাবুর দুশ্চিন্তার আসল কারণ অন্যত্র। পুত্রকন্যাদের নিয়ে গিন্নির বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় এগিয়ে আসছে। কিন্তু তার জন্য যে হ্যাপা তাকে প্রত্যেকবার সইতে হয়, তার চেয়ে চার পেগ হলাহল পান করাও সহজ। এবার শ্রীমতী বায়না ধরেছেন ‘চন্দ্রমুখী’ শাড়ি লাগবে। না হলে বাপের বাড়ি যাবে না। এক পুত্র বলছে হিরো হোন্ডা লাগবে, না হলে প্রেস্টিজ থাকছে না। সেই আদ্যিকালের ময়ূরের পিঠে চড়ে সে আর যাবে না। ওটার হর্স-পাওয়ার নাকি খুবই কম। তা ছাড়া, ধুতি পরে বাইক চালানোর প্রশ্নই ওঠে না, সুতরাং জিনস্‌-এর প্যান্টও দরকার। গণেশ অবশ্য ঘরকুণো, সেও বায়না ধরেছে একটা ল্যাপটপ কিনে দিতে হবে। জাবদা খাতায় অ্যাকাউন্ট মেনটেইন করা যাচ্ছে না। সহস্র সহস্র কোটি টাকার এক নম্বরি এবং দু’নম্বরি হিসেব রাখা অত সহজ নাকি। আর, কম্পিউটার শেখা কোনও ব্যাপারই নয়। সারা জীবন সে মাউস চালিয়ে এল। আর এ তো কলের মাউস। মেয়েদুটোরও সাজগোজের অন্ত নেই। আজ এটা লাগবে, কাল সেটা লাগবে। নন্দীভৃঙ্গী হুশহাশ শিলিগুড়ির হংকং মার্কেটে যাচ্ছে আর আসছে। বিল মেটাচ্ছে তাদের মা। প্রতি বছর বাপের বাড়ি থেকে তো ভালোই আমদানি হয়। বিদেশি প্রসাধনী জিনিসে ঘর বোঝাই হয়ে গেছে। ফ্যাশানের পত্রিকা ক্যুরিয়ারে নিয়মিত আসে। উঠতি বয়সের মেয়ে, সব সময় নজরে রাখা দরকার। ক’দিন ধরে দেখছেন, দু’টো ছেলে, লম্বা জুলফি-ছোট চুল – এখান দিয়ে খুব আসাযাওয়া করছে। জঙ্গী কিনা, তাই বা কে জানে। ধরে একদিন তান্ডব-ধোলাই দিতে হবে।
এসব ব্যাপার নিয়ে একদিন সিরিয়াস আলোচনার জন্য পার্বতীকে ডেকেছিলেন।
— পারু শুনছ …
— ধ্যাৎ, একটু দাঁড়াও না। দারুণ জায়গায় এসে গেছি।
এই হয়েছে আর এক জ্বালা। নন্দীর পিসতুতো ভাই ক্যাবলা সেই কোথা থেকে লাইন টেনে একেবারে তার অন্দরমহলে পৌঁছে দিয়েছে। গতবছর বাপের বাড়ি থেকে ফেরার সময় একটা কালার টিভি বগলদাবা করে পারু ফিরেছে। এখন দু’ মেয়ে আর তাদের মা সিরিয়ালি সিরিয়াল দেখে যাচ্ছে। একটা সিরিয়াল তো কৈলাস উলটে গেলেও দেখতে হবে। কিঁউ কি শশাভি কভি তরমুজ থি। এটা হিন্দি। তার ভালো আসে না। তার চেয়ে নেপালি ভাষা তিনি ভালো বোঝেন। আর একটা সিরিয়াল আছে, সেটাও দেখা চাই। ‘পিসিমার কেন বাঁধানো দাঁত’। বাংলা। এ দু’টো দেখায় ব্যাগড়া হলে তাদের মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়। তিনি শুধু দেখে যাচ্ছেন। যেদিন তার প্রলয়-রাগ উঠবে, সেদিন ওই ক্যাবল-লাইন এক টানে উপড়ে টিভিফিভি এখান থেকে ছুঁড়বেন, একদম শিলিগুড়ির হংকং মার্কেটে গিয়ে পড়বে।
কিছুক্ষণ বাদে চোখ মুছতে মুছতে দেবী এলেন।
— কী ব্যাপার, ডাকছিলে কেন ?
— আহা, অমন রাগ করে কথা বলছ কেন পারু ? একটু মিষ্টি করে বলো।
— মিষ্টি করে মানে ? দেঁওদাঁস – এমনি করে ?
— সে ব্যাটা আবার কে ?
— থাক, তোমার অত জেনে কাজ নেই। আদ্যিকালে পড়ে আছ, তাই থাকো। ঐশ্বরিয়া রাই-এর নাম শুনেছ ? মাধুরী ? শাহ্‌রুখ ? সেই তো উর্বশী আর মেনকা ছাড়া আর কিছু চিনলে না। এত করে বলি পোশাকটা অন্তত একটু ভদ্রলোকের মত পরো, তাও পরবে না। হ্যাঁ গো, এবার পুজোয় একটা সাফারি নেবে নাকি ?
— ও সব পোশাক আমার পোষায় না। পাতলা জিনিস, বাতাস উঠলেই ফরফর করে। সাফারি ফরফরায়তে। বরং, একটা অরিজিনাল বাঘছাল যদি পাও তো নিয়ে এসো। গতবার যেটা দিয়েছিলে, টেরিকটের, একদম টিকল না।
— টিকবে কোত্থেকে ? তোমার টিকের আগুন পড়ে অন্তত বাইশ জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। হাতে কলকে থাকলে তো বেহুঁশ হয়ে পড়ো। অন্য কোথাও তো কলকে পাও না, ঘরে বসে শুধু হুঁস হাঁস করে ধোঁয়া ছেড়ে যাচ্ছ। দাঁড়াও না, পরিবেশদূষণ দপ্তরকে এবার যদি কম্‌প্লেইন না করেছি। এই তোমার জন্যই এখানে টেম্পারেচার বেড়ে গেছে। অ্যাভালাঁস শুরু হল বলে। ডাকছিলে কেন ?
— বলছিলাম যে ঘরে বসে তো সারাক্ষণ শশা আর তরমুজের ছবি দেখে যাচ্ছ, মেয়েদের খোঁজখবর কিছু রাখো ?
— তোমার সে সব ভাবতে হবে না। লক্ষ্মী এবার মরাইবাড়ি এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটিতে লেকচারারের পোস্টে জয়েন করবে। সরস্বতী ভুবনভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেবেন্দ্রসঙ্গীতের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যাচ্ছে। সব ব্যবস্থা, যেখানে যাকে যা দেবার – সব আমাকেই অ্যারেঞ্জ করতে হয়েছে।
— বেশ বেশ, ভালো কথা। কিন্তু তুমি কি লক্ষ করেছ, ক’দিন ধরে দু’টো ছোকরা এখান দিয়ে ঘুরঘুর করছে। ব্যাপারটা কী ? ধরে একদিন দেব নাকি উদোম কেলিয়ে ?
— ও মা, ওরা তো কোম্পানির লোক। অনেক কষ্ট করে ওরা এখানে এসেছে। মেয়েদুটোর সাজগোজের জিনিস, আমার নন-স্টিক বাসনপত্র, চিৎপুর থেকে সারুর বীণা রিপেয়ারিং – সব তো ওরাই করে দিয়েছে। ছেলেদুটো বড় ভালো। আমাকে কি মিষ্টি করে আন্টি বলে ডাকে। কত পরিশ্রমী ওরা, দুটো পয়সা রোজগারের জন্য এই কৈলাস পর্যন্ত চলে এসেছে। তোমার কথাও জিজ্ঞেস করছিল। বলছিল আঙ্কেলের জন্য খুব ভালো শ্যাম্পু আছে ওদের কাছে। হ্যাঁ গো, আমি কিন্তু পরশু বিকেলে ওদের আসতে বলেছি। সারুকে বলেছি বরুণকাকুর জন্মদিনে যে গানটা করেছিল, সেটা রেডি রাখতে। লক্ষ্মীকে বলেছি বিষ্ণুজেঠুর বাড়িতে যে পটলের কাটলেট করেছিল, সেটা বানাতে। রাগ কোরও না প্লিজ, আমাকে বলেছে ওদের চেইন-এ জয়েন করতে। ঘরে বসেই নাকি অনেক টাকা রোজগার করা যায়। ওরা শুধু বলেছে একদিন ইন্দ্রের সভায় গিয়ে ঊর্বশীদের সঙ্গে ওদের ইন্ট্রোডিউস করিয়ে দিতে।
দিন তিনেক বাদে বিকেলবেলায় নন্দী এসে খবর দিল – প্রভু, দু’জন লোক আপনার সাক্ষাৎপ্রার্থী। ভোলানাথবাবুর মৌতাতের সময় হয়েছিল। সাজসরঞ্জাম আজকাল লুকিয়ে রাখতে হয়। পার্বতী টের পেলে সব ছুঁড়ে ফেলে দেবে। হত মাসে কুবের একটা হিরেবসানো-সোনাবাঁধানো কলকে দিয়েছে। ওর নাকি অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধের ব্যাপারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটায় প্রচুর লাভ হয়েছে। তাছাড়া ছোট মাপের রথ তৈরির লগ্নীতেও প্রচুর লাভ হয়েছে। অষ্টসিদ্ধি শেয়ারেও নাকি ভালো দান মেরেছে। তাই ভেট পাঠিয়েছে। ভোলানাথবাবু ভাবছিলেন আজ ওটার মহরত করবেন। পার্বতী বাড়ি নেই। মনসা নাকি দারুণ একটা লেহেঙ্গা-চোলি কিনেছে, সেটা দেখতে গেছে। বলে গেছে — এখুনি আসছি। খুব তাড়াতাড়ি দু’ছিলেম মেরে দিতে হবে। কিন্তু এখন আবার কে এলো। কাঠমান্ডুর সেই লোকটা হতে পারে। গত মাসে বেশ সরেস জিনিস খাইয়েছিল। নন্দীকে বললেন – পাঠিয়ে দে।
দু’জন ভদ্রলোক এসে ঘরে ঢুকল। ভোলাবাবু দেখেই চিনলেন। এরাই মাঝে মাঝে এখান দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। পার্বতীর সাপ্লায়ার। দু’জনের হাতেই ঢাউস ব্যাগ। মুখ এবং জুতো চকচকে। দু’জনেরই গলায় চেক-চেক লম্বা ন্যাকড়ার ফালি ঝুলছে। ভোলাবাবুকে জোড় হাতে নমস্কার করল ওরা। তিনি আঙুল তুলে ঘরের কোণে একটা রিফু করা পুরনো বাঘছাল দেখিয়ে দিলেন। ওরা ইতস্তত করছে দেখে নন্দী স্মার্টলি বলল – সার টেল সিট দেয়ার। ভোলাবাবু তার দিকে তাকাতেই বেশ ভয় পেয়ে গেল নন্দী। স্যারের এ দৃষ্টি সে চেনে। আর একটু হলেই ভস্ম হয়ে যেত। সংশোধন করে নিয়ে তাড়াতাড়ি বলল – প্রভু তুমাদের বইসতে আজ্ঞা কইরছেন বট্যে। হুই হোথা। নন্দীর মাঝে মাঝে একটু বাঁকুড়ার টান এসে যায়। দেশের টান বলে কথা।
লোক দু’জন অনেক কষ্টে হাঁটু ভাঁজ করে বসল। ভোলাবাবু তাদের দিকে নজর ফেললেন।
— কী ব্যাপার, আমার কাছে কী দরকার ?
— আংকেল, মানে স্যার, ইয়ে কী বলে প্রভু, আমরা ‘গোময় ভারত কোম্পানি’ থেকে আসছি। আমি সম্পদ গুছাইত, আর এ চম্পট দে। আমরা আপনাকে আমাদের কিছু প্রোডাক্ট দেখাব। নাম শুনেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমাদের একেবারে খাঁটি ভারতীয় কোম্পানি। আমাদের বিশেষত্ব হচ্ছে প্রতিটি আইটেম একদম বিশুদ্ধ হিন্দু মতে তৈরি। ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সনাতন ধর্মের কথা মনে রেখে সমস্ত প্রোডাক্টে উচ্চবর্ণের গোময় এবং চোনার এক্সট্রাক্ট বকযন্ত্রে চোলাই করে পরিমাণ মত মেশানো হয়।
ভোলাবাবুর কৌতূহল হল। জিজ্ঞেস করলেন – উচ্চবর্ণের গোময় ব্যাপারটা কী জিনিস ?
— আজ্ঞে স্যার, আজকাল তো বিদেশি ষাঁড়ের বীজ এনে হিমায়িত করে রেখে দেওয়া হচ্ছে। তারপর সময় বুঝে আমাদের ভারতীয় সতীসাধ্বী গাভীদের গাভিন করা হচ্ছে। তার ফলে সংকর জাতের গোরু জন্মাচ্ছে। সেগুলোকে প্রকৃত ভারতীয় গাভী বলা যায় কি ? আমাদের সনাতন ভারতীয় গোরুগুলো দুবলাপাতলা হতে পারে, দুধ কম দিতে পারে, কিন্তু খাঁটি আর্যরক্ত বইছে ওদের শরীরে। আমাদের কোম্পানির নিজস্ব পরীক্ষাগারে এসব নিয়ে নিরন্তর নিবিড় গবেষণা চলছে। জানেন তো স্যার, গো যুক্ত এষণাই গবেষণা। ধারণা করা হচ্ছে মানুষের আত্মায় যদি কোনও ভাবে ইন্‌ফেকশন হয়ে যায়, তবে গোময়ের মত অ্যান্টিসেপ্‌টিক আর নেই।
নন্দী অনেকক্ষণ ধরে উসখুস করছিল। ভদ্রলোক থামতেই সে গলাটা বাড়িয়ে দিল – একটা ডাঁশ মারার ওষুধ আনা করিয়ে দাও না। বড় ডিস্টাপ করে বট্যে পোকাটো। ভদ্রলোক নন্দীকে বিশেষ পাত্তা দিল না। উৎসাহ নিয়ে আবার ভোলাবাবুর সঙ্গে কথা শুরু করল।
— স্যার, বিশেষ করে আপনার জন্য একটা শ্যাম্পু আছে। একবার ট্রাই করে দেখুন। আপনার ওই জটা একদম রেশম-কোমল হয়ে যাবে। নিখরি নিখরি গুলাব য্যায়সি।
ভোলানাথবাবু মৃদু হাসলেন। মাথার জটায় একবার হাত দিলেন। হাতটা ভিজে গেল।
— আমার জটা সাফ হয়ে গেল তোদের কী দশা হবে জানিস ?
মানে স্যার …
আমার জটায় যে গঙ্গাকে ধরে রেখেছি, তার কী হবে ?
উজবুক, আমার জটা সাফ হয়ে গেলে সে বেটি এমন জোরে ছুটবে যে, তোদের পুরো ইন্ডিয়া বানভাসি হয়ে যাবে। কোনও লকগেটই তাকে আটকাতে পারবে না। সব তছনছ হয়ে যাবে। তোরা সবাই ভেসে কোথায় চলে যাবি, তার ঠিকানা নেই।
লোকদুটো বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। একজন গলায়-ঝোলানো সেই ন্যাকড়ার ফালির ডগা মনোযোগ দিয়ে চিবুচ্ছে।
— তাহলে স্যার, এই দাঁতের মাজনটা একবার দেখুন। এটা ব্যবহার করলে আপনি কুড়মুড় করে লোহার কড়াই চিবিয়ে খেতে পারবেন।
— আমি নিমের ডাল ব্যবহার করি।
— এই সাবানটা তাহলে ট্রাই করুন। আপনার শরীরের সমস্ত ধুলোবালি, আপনার গলার ওই নীল স্পট – সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
ভোলাবাবু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলেন। আর একটু হলেই তার কপালের তৃতীয় নয়ন জ্বলে উঠত। এরা কী করে জানবে তার শরীরের সমস্ত ধুলোবালি এক হয়ে জন্ম হয় নীহারিকার। তার কন্ঠের ওই চিহ্ন সৃষ্টি রক্ষার প্রমাণ। তাই তিনি নীলকন্ঠ। ওরা কী করে জানবে তিনিই স্বয়ং কল্পতরু।
— স্যার, এটা দেখুন, আমাদের হার্বাল প্রোডাক্ট। আপনাকে চিরযৌবন এনে দেবে।
ভোলাবাবু নন্দীর দিকে ফিরে বললেন – নন্দী, আমার খড়মটা দে তো। নন্দী একলাফে লোকদুটোর মাঝখানে পড়ে ঘাড় ধরে দু’জনকেই শূন্যে তুলে নিল। একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল – পলাইন দেন। প্রভুর খড়ম বড় কঠিন হে। পাংখাবাড়ি রোড ধরেন। শর্টকাট বট্যে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।