কবিতায় বিশ্বজিৎ মাইতি

চিরঞ্জীব ও আমি।

যাদুবিদ্যার সঙ্গে রাত্রিকালীন বৃষ্টির শব্দ মিশিয়ে
মন্ত্র্ধ্বনি তৈরির গল্প করে আমার বন্ধু চিরঞ্জীব।
মধু ও রানী মৌমাছির সম্পর্ক আসলে অলৌকিক,
আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে চিরঞ্জীব।
নাম না জানা পাহাড়ি পাখির
লাল ঠোঁট ও খয়েরি ডানা থেকে বিচ্ছুরিত আলো
আসলে এক ধরণের যৌনতাবর্ধক অলৌকিক রশ্মি ।
আদিবাসী যুবতীকে নিয়ে জনপ্রিয় কবিতা লিখতে চাইলে
ইচ্ছে হোক বা না হোক যুবতির ক্লিভেজকে
দুই টিলার মধ্যবর্তী ঢালু ভূমি হিসাবে কল্পনা করা জরুরি,
চিরঞ্জীব আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে।

চিরঞ্জীব ও আমি প্রায়ই তর্ক করি।
আমাদের বৈকালিক ভ্রমণ কিংবা সান্ধ্য-আড্ডায়
‘মৃত্যুদন্ড রদ হওয়া উচিত,এতদবিষয়ক প্রস্তাব’ নিয়ে আলোচনায়
আমি আততায়ী কিংবা আক্রান্তের পক্ষ নিই,
চিরঞ্জীব আক্রান্তের দেহরক্ষী কিংবা নিহতের আত্মীয়ের পক্ষ নেয়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমি নির্ভর করি
মৌলিক অধিকার এবং সংবিধানের প্রস্তাবনায়।
কিন্তু চিরঞ্জীব সিদ্ধান্ত টানতে চায়
গাছের ডালে ঝুলে থাকা বালুচরি আঁচল
বেসিনের গায়ে আটকে থাকা লাল রংয়ের টিপ
কিংবা মেঝেতে পড়ে থাকা সেফটিপিনের উপর নির্ভর করে।
যে কোনো বিষয়ে তর্কের সিদ্ধান্তে
চিরঞ্জীব আমার কথা মেনে নেয়
আমি মেনে নিই চিরঞ্জীবের কথা।

চিরঞ্জীব আমার বন্ধু।
কাঁচা-পাকা জুলফি ও কোমরের অটো-লক বেল্টে দেখলে,
চিরঞ্জীব একজন স্মার্ট লুক যুবক।
বারমুডা ও স্যান্ডো গেঞ্জিতে বসার ঘরে চিরঞ্জীব
একজন ঘরোয়া যুবক।
এই চিরঞ্জীবের একটি ঘোড়াশালা এবং একটি ঘোড়া আছে।
চিরঞ্জীব নিজের পোষা ঘোড়ার পিঠে চেপে
রেসের মাঠে নামে অসংখ্য লোকের সামনে,
আমি তাকে ‘ উইন উইন ‘ বলে সমর্থন করি।
রেস শেষে মাথা নিচু করে বসে থাকলে
আমি তার চিবুকের ক্ষতস্থানে শুশ্রূষা করি
চোখের নিচে কালসিটে দাগ,কাফ-মাসলে টান পরীক্ষা করি,
ঘোড়াটিকে ঘাস খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিই উন্মুক্ত প্রান্তরে।

চিরঞ্জীব আমার খুবই পুরানো বন্ধু।
দাবানল কিংবা বজ্রপাত দেখতে দেখতে
আদিম গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ হিসাবে
আগুনের ব্যবহার শিখেছিলাম,
শুয়োরের কাঁচা মাংস ঝলসে খেতে শিখেছিলাম,
চিরঞ্জীব সেই সময় থেকে আমার বন্ধু।
খাজুরাহোর গুহাগাত্রে যে সব মিথুুনমূর্তি দেখে
লোকে বিস্মিত, লজ্জিত, উত্তেজিত হয়ে পড়েন
সেইসব ভাস্কর্যের খোদাাইযের সময় থেকে চিরঞ্জীব আমার বন্ধু।
কলম্বাসের আগে থেকেই
যে সমস্ত নাবিকেরা জাহাজে চেপে
বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য বিস্তারে গিয়েছিলাম
অসহায় মেয়ে দেখলে ধর্ষণ করতাম,
তুলে নিয়ে গিয়ে ঘরকন্নার কাজে
কিংবা খেত দেখার কাজে নিযুক্ত করতাম,
বলশালী লোক দেখলে বিনয়ে গলে পড়তাম,
চিরঞ্জীব,সেই আবহমান কাল থেকেই আমার বন্ধু।

চিরঞ্জীবের প্রেমিকার কণ্ঠস্বর একটু ফ্যাসফ্যাসে।
আমার প্রেমিকার কন্ঠস্বর একটু রিনরিনে।
চিরঞ্জীবের প্রেমিকা তার এক কলিগের বউ।
আমার প্রেমিকা আমার বউয়ের এক ছাত্রী।
চিরঞ্জীবের প্রেমিকা জিরো ফিগার।
আমার প্রেমিকা ঈষৎ স্থুলাঙ্গী।
চিরঞ্জীবের প্রেমিকা একটু বেঁটে।
আমার প্রেমিকা একটু লম্বা।
চিরঞ্জীবের প্রেমিকা কথায় কথায় স্বামীর তুলনা টানে।
আমার প্রেমিকা মাঝে মাঝেই তার বাবার তুলনা টানে।
বিটোফেন বা অন্য কেউ কখনও
আমাদের প্রেমিকাদের  কণ্ঠস্বরের অনুসরণে স্বরলিপি সৃষ্টি করেননি।
আমি এবং চিরঞ্জীব
আমাদের প্রেমিকাদের কণ্ঠস্বরের
দ্বিধা-কম্পিত,প্রণয় নিয়ন্ত্রিত স্বরলিপি
সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছি বহুকাল ধরে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।