গুচ্ছকবিতায় প্রভাত মণ্ডল

১. স্মৃতি

হে রাতের তারা
আজ ম্লান তোর রূপের ছটা ,
শুধু আবছা অন্ধকারে
খুঁজে ফেরে বারে বারে
মোর মনে পুরাতন স্মৃতিকথা ।
বিঘেত-বিঘেত আরো
লুকোচুরি কত খেলা
আজ নাকি হয়ে গেছে গেঁয়ো ,
তাই তোমাদের কাছে
বলি নাকো লোক লাজে ,
যদি করো সবা মাঝে হেঁয় ।
গেঁয়ো সব যত খেলা
সে সবই যে মন ভোলা ,
প্রাণ আছে সে সবের মাঝে ।
আঁখি খুলে চেয়ে দেখো
গাঁ পানে চোখ রাখো ,
খুঁজে পেতে পারো সেই স্মৃতি ।
সে স্মৃতি তে কালি নেই
তারারাও ম্লান নেই ,
মলিনতা সদা হাসি ভরা ।
সবুজে সবুজে ভরা
স্মৃতি সবই মন কাড়া
বারেক ঘোরাও দুটি আঁখি ।

 

২. কি পেলে

সন্ধ‍্যা ,
রজনীগন্ধার গন্ধ ঝরে
তোমার চুলের সুভাসে ,
মনে পড়ে সেই কথা
প্রথম দিনের স্মৃতি ,
তুমি তাতে টেনে দিয়েছো ইতি ।
কথা দিয়েছিলে , হাতে হাত রেখে
যাবেনা কখনো ছেড়ে ,
যতই থাকো না কেনো
হাজার লোকের ভীড়ে ,
তবু তো হারিয়ে গেলে !
আপন ডানা মেলে
ফিরলে না আর ঘরে ।
যে ঘরে ছড়িয়েছিলে সুভাস
তুমি না এলে রইতাম উপবাস ।
সবই ভুলে গেলে ,
কি পেলে !
ভেঙে গেছে মন নয়
এক বিশ্বাসের পাহাড় ।\
দুবেলা কি জোটাতে পারতাম না
তোমার আহার !
হয়তো তোমার চাহিদা ছিলো অনেক বেশি
তুমি দিনের বেলা
ধরতে চেয়েছিলে শশি ,
কি পেলে !
আমি তো পারিনি তোমায় দিতে
চেয়েছো তুমি যত কিছু ,
তবে যা কিছু দিয়েছি
সেটুকুও পারোনি নিতে ,
সকল অপমান
নিয়েছি মাথা পেতে ।
যদি কখনো পাও
জীবনসুখ পরিমাপের ফিতে
মেপে দেখো , কি পেলে !
যা পেলে ! সে তো নোনা পানি ।

 

৩. পড়ন্ত বেলা

সূর্য স্তিমিত হয়ে এলো
ফিরলো পাখিরা বাসায় ,
নিভৃত কুজনে
একাকী দুটো পাখি ।
দোহে মিলি
ঠোঁটে ঠোঁট মিলায়ে
আপন আলয়ে , কত সুখে
কইবে কথা ।
সুখ দুঃখ মনের শত ব‍্যথা
আমরা কি অত বুঝি ?
শুধু নিজের টুকুই খুঁজি ,
একটু কান পেতে শোনো
মেলাও ওদের আঁখিতে আঁখি ।
খুঁজে পাবে ভাষা
দেখবে তোমার মতোই ,
ওদের মনেও আশা
দোহে মিলিবারে ।
দুঃখ-সুখের ভেলা নিয়ে
ওরাও উজার করে দিতে চায়
মনের সকল বন্ধ দুয়ার ,
নিভৃত কুজনে মনের গহনে ।
পড়ন্ত বেলায় ওরা দুটো পাখি
মিলায়ে দোহে আঁখি ,
হারিয়ে যেতে চায়
একটু খোঁজো না ।

 

৪. অবকাশে

ফুটলো আলো ,
চারিদিক সব ভিজে ।
ঘাসের ডগায়
মুক্তোর মতো শিশিরবিন্দু।
মনে পড়ে তোর চোখের জলের
প্রথম ছবি , সে তো এই
শিশিরের মতোই স্বচ্ছ ছিলো ।
উঠেছে রবি ,
শুকিয়ে গেছে ভিজে ঘাস
তবু তো মনে পড়ে সেই কথা
তুই পেয়েছিলিস ব‍্যথা , অকারণে
বলেছিলিস ,
আমি তোমায় বড্ড ভালোবাসি !
মোর জীবনে এনেছিলি আলো ।
চিনতাম না তোকে
তাতে কি ,
তোর চোখের জলের ভাষা
কি এক অদ্ভুত অনুভূতি
জাগিয়েছিলো এ বুকে ।
হঠাৎ করে
তোর ভালোবাসার ভীড় ,
শূণ‍্য হলো নিমেষে
তাইতো তোকে আজ শুধু মনে পড়ে
অবকাশে ।
আজ সন্ধ‍্যা নামলো
তাই বুঝি ফিরে গেলি ঘরে ,
আবার অনেক দিন পরে
হয়তো দেখা হবে !
সেদিন চিনেও
চিনবিনা মোরে ।

 

৫. স্বপ্ন লোকের ওপার

প্রাণের দুয়ার খুললো এবে
ফাগুন এলো দ্বারে ,
মন মধুকর মেললো পাখা
স্বপ্ন রঙিন পটে আঁকা
কোন সে সুদূরে ,
মোর মনের ওপারে ।
লাল নীল সব স্বপ্ন মাঝে
হৃদ মাঝারে সেতার বাজে ,
মন লাগেনা কোনো কাজে
তুমি এলে তাই ,
মোর হৃদ কমলে , হিয়ার মাঝে
তোমায় দিলাম ঠাঁই ।
কৃষ্ণচূঢ়ার শাখে শাখে
দোয়েল ফিঙে কোকিল ডাকে ,
বনটিয়া আজ মেললো পাখা
ফাগুন এলো বুঝি ,
মোর মনের শত স্বপ্ন আশা
শুধু তোমার মাঝেই খুঁজি ।
তোমার হাওয়ার পরশ মেখে
গাঁ’এর রাখাল এঁকে বেঁকে ,
গোধূলিতেও উড়িয়ে চলে
মনের সুখে ঘুড়ি ,
ঘুড়ির টানে ভুলেই যায়
মায়ের হাতের ছরি ।
ওগো ফাগুন , ওগো ফাগুন
খুলে দিলে দ্বার
মোরে তোমার সাথে নিয়ে চলো
স্বপ্নলোকের ওপার ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।