কবিতায় প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়
রক্তের ঘুমন্ত অসূয়া
এইভাবে বারবার নিজের ছায়াকে এগিয়ে দিয়ে
ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া
একজন মানুষ-তোমাকে-ঠিক তোমার মতন দেখতে
নাকি আমার মতন
এই ধন্ধের দোলাচলতায়
আলোর একমাত্র শিখাটা এতো তীব্র কাঁপছে
যে ভয় হয়
অন্ধকারের বীজমন্ত্র অন্ধকারেই উচ্চারণ করতে হয়
আর তাই দীর্ঘস্থায়ী
এ আঁধার
উন্মীলন – অত সহজে হবার নয়
রক্তের ঘুমন্ত অসূয়া
দল বেঁধে পিকনিক করবার অছিলায়
হত্যাপ্রান্তরে এনে ফেলেছে
হত্যা না করে আর
নিহত না হয়ে
কারুরই পরিত্রাণ নেই
তুমি স্থিতির কথা জানাতে চাইলে
স্থবিরতা গ্রাস করতে পারে
অস্থিরতার দলিলগুলো গুণে গেঁথে
সাজিয়ে রাখতে চাইলে
মৃত্যুর পরবর্তী মহাফেজখানায়
ঘাড় গুঁজে বসে থাকতে হবে
রাস্তাগুলো কাটাকুটি খেলতে খেলতে
এত দ্রুতবেগে এক থেকে একাধিক হয়ে
আবার এক হয়ে ওঠার গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে
যে ঠিক ঠাহর হয় না
কোথায় দাঁড়িয়ে
অভিভূত বশ্যতায় মাথা নিয়ে গেণ্ডুয়া খেলছে পা
বিষ-কে আর সুগার কোটেড প্রলোভন দেখাতে হচ্ছে না
খুব সহজেই মিশে থাকছে
নির্বিকার কণ্ঠনালী
নির্লজ্জ জিভ
লেখার টেবিল থেকে উঠে জানলার বাইরে চোখ রাখা
রাস্তায় নারকীয় উৎসবের জৌলুস
ভাঁড়েদের ছদ্ম কৌপীন
আর ফিরে এসে তুমি কোন্ কথা লিখবে
সে কোন্ অমোঘ শব্দ উচ্চারিত হবে বলে
এখনও অপেক্ষা করে থাকা
ঘুমন্ত রক্তের অসূয়া
আরক্ত দায়ভার বহনও করছেনা
স্বীকারও করছেনা
উত্তরে ইঁদুর দক্ষিণে কাক পূবে শৃগাল পশ্চিমে শকুন
আর অতিজীবিত মরুভূমি অতি হিমায়িত বরফের ক্যামোফ্লেজ নিয়ে
সবকিছু ঢেকে দিতে
ধীর নিশ্চিত
এগিয়ে আসছে…
ভাইরাস একটা কাউন্টার প্রোগ্রাম
সান্ধ্য ভাষার আড়ালে
লেডি অফ দ্য ল্যাম্প ফুটপাথ বদল করেন
আর একটা মাছিমারা কেরানি দেখে যায়
অক্ষরগুলো একদিন সব জলে ধুয়ে যাবে
একটানা স্রোতের ধাক্কায় গলে যাবে নিজস্ব জ্যামিতি
তুমি কোন ভাষায় চিঠি লিখবে সেদিন দূর থেকে ডাকবে
আমার ভাষাকে আত্মহত্যাপ্রবণ মনে হচ্ছে ইদানীং
কোথাও পাড় ভাঙছে আর একটুকরো ঘাস মুখে পাতা মুখে
পিঁপড়েরা তলিয়ে যাচ্ছে তার ভেতর
আধুনিক আত্মহত্যাপ্রবণ মনে হচ্ছে ভাষাকে
যেখানে পাড় গড়ছে
বালি শুধু বালি
আমার ভাষার বিরুদ্ধে আমারই ভাষা চালু হয়েছে
কে বলে রক্তপাত অনিবার্য নয়
ঝাঁঝরি বেয়ে নেমে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী নয়