• Uncategorized
  • 0

ওড়ার সাধ, আর এরোপ্লেন

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।

লিখেছেন – মৃদুল শ্রীমানী

সেই কবে পড়েছি ‘হায় হায় কী মজায় উড়ে যায় পাখি…’ আর তালগাছের স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্বপ্নের মধ্যে উড়ে চলা। সে সব সহজ পাঠের দিন।
অনেক পরে পড়লাম কবির পারস‍্যে যাবার গল্প। প্রবীণ কবির রীতিমতো স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে তবেই বিমান ভ্রমণের ঝুঁকি নেওয়া গেল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বলছি। ‘তালগাছ’ কবিতায় পড়ে ছিলাম উড়ে যাবার ইচ্ছার কথা। কিন্তু মাটি মায়ের সঙ্গ ঠিক ঠিক ছাড়তে চায় না সে তালগাছ। পারস্যযাত্রী কবির বিমান যাত্রা তেমন ভাল লাগল না। ট্রেন যাত্রা, সেই যেন ছিল ভাল। মাটি মাকে ছুঁয়ে থেকে চলা। সে যেন অনেক নিরাপদ। উড়ে যাবার মধ্যে কেমন বিচ্ছিন্নতা কাজ করে। আবার ‘সেঁজুতি’ কাব্যগ্রন্থের “পক্ষীমানব” কবিতায় বললেন, পাখিকে আকাশ ছেড়ে দাও। আকাশের অধিকার থাকুক পাখিদের একতিয়ারে। কবি কি আশঙ্কা করেছিলেন, একদিন বিমান হানা দিয়ে পার্ল হারবার ধ্বংস করা হবে? একদিন ‘বি ৫২’ বিমানের পেটে হিরোশিমা নাগাসাকিতে ফেলে আসা হবে “লিটল বয়” ও “ফ‍্যাটম‍্যান” নামে পারমাণবিক বোমা? আর সভ‍্যতার কলঙ্ক রচিত হবে? ন‌ইলে, প্রৌঢ়ত্বের অবসানে তিনি কেন “প্রান্তিক” কাব‍্যগ্রন্থে “দানবপক্ষী” কথাটা ব‍্যবহার করলেন? দেখতে পাই, বিমান দুর্ঘটনা তাঁর “সে” গল্পে একটা মোচড় এনেছে।
বিমান আর উড্ডয়ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নানাভাবে ভাবিয়েছে। যুক্তি দিয়ে চিন্তনে অভ‍্যস্ত কবি পুঁজিপতি সাম্রাজ্যলোভীর হাতে প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক ব‍্যবহার নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন ছিলেন।
আজকের দিনটি বিমান যাত্রার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দিন। ১৯০৩ সালে এমন একটা ১৭ ডিসেম্বর তারিখে, সকাল দশটা পঁয়ত্রিশ মিনিটে দুইভাই উইলবার রাইট ( ১৬ এপ্রিল, ১৮৬৭ – মে ১০, ১৯৯২) আর অরভিল রাইট ( ১৯ আগস্ট, ১৮৭১ – ৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৮) প্রথম বিমান ওড়ালেন। বিমান চালকের আসনে প্রথম বসেন ছোট ভাই অরভিল রাইট। উড়ে ছিলেন বারো সেকেন্ড আর গিয়েছিলেন ১২০ ফিট দূরত্ব। তার পরে উড়লেন বড়ভাই উইলবার রাইট। ঊনষাট সেকেন্ডের মতো। বছর চারেকের একান্ত চেষ্টা আর অধ‍্যবসায়ের ফসল ওঁদের এই ওড়াটুকু। এই প্রথম যন্ত্রের সাহায্যে ওড়া। হাওয়ায় ভেসে যাওয়া নয়, কলকব্জার সাহায্যে ঠিকঠাক ওড়া। ওঁদের উড্ডয়ন যন্ত্রটির নাম রেখেছিলেন “ফ্লায়ার”। পরবর্তীতে এরোপ্লেনের ইতিহাস এই ফ্লায়ারের বিবর্তনের কথামালা। আজকের দিনে আমেরিকার সাউথ ক‍্যারোলিনার কিটি হকের মাইল চারেক দক্ষিণে সাইকেল দোকানের মালিকেরা উড়িয়ে নিয়ে গেলেন মানুষকে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।