অণু গল্পে তনিমা হাজরা 

আমি তনিমা হাজরা। লিখি কবিতা, গল্প, অনুগল্প, মুক্তগদ্য, প্রবন্ধ।

খবর তৈরির সুপারি

“দাদা আমায় ডেকেচেন?” ভালোমানুষের পো এর মতো ঘাড় চুলকে দরজার পাশের সোফায় ইতস্ততভাবে এসে বসে হীরালাল।
” হ্যাঁ রে শুয়ার, আজকাল দেখছি তোদের মতো বেজম্মাদেরও তলব দিতে লাগে? তা সারাদিন আজকাল ভালোই নানারকম টেন্ডার জুটছে নাকি? মনে রাখিস তোকে নদ্দমা থেকে তুলে এলাইনে প্রথম আমিই এনেছিলাম”। ব্লেন্ডেড স্কচের গ্লাসে বরফ মেশাতে মেশাতে বলেন থানার ওসি রমেশ চাকলাদার।
“হ্যাঁ স্যার,  তা কি আর মনে রাখিনি? আপনাদের দয়াতেই তো বাইক হাঁকিয়ে রাস্তাঘাটে অমন র‍্যালা মেরে হিরোগিরি করে ঘুরতে পারি। তাপ্পর ধরুন গে দোকানে দোকানে পান-বিড়ি,  মাচ-মাংস,  সব্জি-শাক সব ফ্রি। সব ঢ্যামনা শালারা যাক্কে বলে এক্কেবারে ভয়েময়ে জুজু। তাপ্পর মাসে এট্টা আধটা ধসসোন কেস পেলে শরীলেও জুত-আরাম সুক। হেঁ হেঁ হেঁ, তা স্যার এবারের কেসটা কি?” আবেগে একেবারে হাত কচলাতে থাকে হীরালাল।
গ্লাসটা কাঁচের টেবিলের উপর রেখে সরুচোখে হীরালালের মুখের দিকে তাকায় রমেশ চাকলাদার।
বলে, “শোন  তোর ভাগ্য এবার খুলে গেছে রে। খোদ মন্ত্রীসাহেবের কাছ থেকে সুপারি এসেছে এবার। বিপক্ষ পার্টির সব হারামিরা যত আবোলতাবোল ইস্যু নিয়ে লাফড়া করছে খুব। আর সব বাঞ্চোত মিডিয়াগুলো সেই রসের ঝোল টেনে টেনে রাজ্যের লোকের লালা বার করছে। হাওয়াটা এট্টু দুচারদিনের জন্য অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে বুঝলি কিনা। আরে পাব্লিক হচ্ছে ঘ্যানঘ্যানে খোকাখুকির দল। এট্টা খবরের লেবেঞ্চুস মুকে গুঁজে দাও মালগুলো ওম্নি তার পোঁদে গিয়ে শুঁকবে। শালার পাব্লিকের অঢেল গুলতানির সময় বুইলি”। নেশার ঝোঁকে চাকলাদারের ভেতরকার নর্দমা একেবারে ভক ভক করে শব্দের দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।
” তা স্যার কাজটা কি তা কিন্তু আপনি একোনো বলেন নি”, গদগদ কন্ঠে বলে হীরালাল।
ঘোর ঘোর লাল কুতকুতে চোখে সোফার পাশের সাইড ল্যাম্পের ঢাকা আলোয় বুনো ভাল্লুকের মতো হিংস্র লাগে চাকলাদারকে।
হীরালালের ঘাড়ের কাছে হিস হিস করে সে বলে, “ফুটপাতের দুচারটে মাগীকে ধরে এট্টু রেপ করে দিতে হবে সোনা। শোন মাঝবয়সীতে হবে না। ওটা এখন কমন হয়ে গেছে। কচিকাঁচাও বেশ একঘেয়ে হয়ে গেছে বুঝলি, তুই,  তুই বরং এট্টা কাজ কর যদি সিনিয়র সিটিজেন পাস তো খবরটা বেশ খাবে। চিন্তা নেই, পাটির লোকাল কমিটিতেও তোকে ঢুকিয়ে দেব’খন এট্টু বলে কয়ে। এই নে এ্যাডভান্স রাখ বিশ, কাজ হয়ে গেলে বাকি তিরিশ পাবি। তোর দলের লোকদের খবর দে। দুতিন দিনের মধ্যেই কাজটা হওয়া চাই। হয়ে গেলে এট্টু মতুরাবেন্দাবন ঘুরে আসিস বাপ! এ তল্লাটে যেন বেশ কিছুদিন না দেখি যদ্দিন না বিপক্ষের দুচারটে হারামিকে লকআপে ঢুকিয়ে ঘাকতক দিয়ে কেসটা ডিসমিস না করতে পারি”।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।