• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় নন্দিতা আচার্য্য

স্কুটি ও রাজপুত্র

গঙ্গার আঁশটে জলে নাক ডুবিয়ে সে বলে…গঙ্গা, তুমি কেন তোমার ছেলে ভীষ্মকে ত্যাগ করলে? বাবা কখন পাশে এসে দাঁড়ায়, খেয়ালই করেনা সে। সেই তো দূরে সুইম করছিল…
জলের ভেতর মুখ ডুবিয়ে কি দুষ্টুমি হচ্ছিল…হুম?
এ সময়টা বাবা মেয়ের সাঁতার কাটা এবং সাঁতার শেখার সময়।আর তখন-ই  জলের ভেতর  দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ে যে কত কিছু করে! কখন সে মারমেড…রাজপুত্রের অপেক্ষা করে। না না,  সে বরং প্রিন্স হয়ে পক্ষীরাজ ঘোড়া উড়িয়ে… জলের ওপর দিয়ে ভেসে বেড়াবে? যদিও সে একটা ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে। তবুও প্রিন্সেস হতে তার ভাল লাগেনা।ওরা যেন কেমন দুর্বল হয়। তাই সে রাজপুত্র! জলের রাজকুমারী নীল ঢেউয়ের মাথায় চড়ে তার জন্য হাত ভর্তি প্রবাল নিয়ে আসে তখন…
তোমার কিন্তু একটুও হাত-পা নড়েনি দিয়া!এমন করলে সাঁতার শিখবে কি করে?চল দেখাও আমায়…কেমন ভাসতে পারছো?
একটু বেশি জলে বাবা তাকে ছেড়ে দেয়। সে প্রাণপণে হাত-পা ছোড়ে। এবার সে বিদ্যাসাগর। মায়ের ডাকে বর্ষার ভরা নদী সাঁতরে পেরচ্ছে। …বাবা, এখ্নও তো বর্ষাকাল, তাই না?
হ্যাঁ তো… দেখছনা কেমন লাল জল? এই জলেই ইলিশ আসে। ভাল করে হাত-পা নাড়ো।
গঙ্গাদেবী কি এই জলের তলায় আছে?
হুম, আছে তো। যারা খায়না, দুষ্টু – তাদের তিনি ভালবাসেন না।
ভীষ্মও কি খেতনা আর দুষ্টু ছিল?
বাবার ভ্রু কুঁচকে ওঠে… হাসিও পেয়ে যায়। সারাদিন দাদুর কাছে গল্প শোনে আর সেই নিয়ে কল্পনার জগতে ভেসে বেড়ায়!
মেয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে চেঁচিয়ে বলে…বাবা, ভীষ্মর জন্য আমার দুঃখ হয়! কাঁদলে তুমি রাগ কর…কিন্তু তবু আমার কান্না আসে।… ভীষ্মর জন্য, কর্ণের জন্য আর রাবণের জন্য!  কেউ কি এদের ভালবাসবে না?
বাবা ক্ষণিক থমকে যায়। …ভালবাসে তো বাবু! রাবণের পুজোও তো হয়।তুমি জাননা?
মেয়ে আহ্লাদে  বাবার গলা ধরে ঝুলে পড়ে। …বাবা, সত্যি!
হুম…কিন্তু আবার তুমি কোলে উঠে পড়লে কেন?আর পাঁচ মিনিট থাকবো। চল, তাড়াতাড়ি সাঁতার দাও।
বাবা মেয়ে , পাশাপাশি দুজন সাঁতার কেটে যায়। খানিক দূর দিয়ে ভেসে যায় একটা  বিরাট  খড়ের চালা। মেয়ে উত্তেজিত। বাবা বাবা,দেখ না…
হ্যাঁ সোনা… বন্যা হয়েছে তো, কারুর ঘরের চাল ভেসে যাচ্ছে!
গরীব মানুষের?
হ্যাঁ সোনা!
মেয়ের মুখ কালো হয়ে ওঠে। -বাবা, সবার এত কষ্ট কেন? …আবার তার চোখে জল এসে যায়। তাড়াতাড়ি নদীতে মাথা ডুবিয়ে দেয়। বাবা দেখলে তাকে দুর্বল ভাববে যে!
কষ্টকে যে ডিঙিয়ে যেতে পারে, সে-ই তও বীর। আর তাতেই সবচেয়ে আনন্দ লাগে।
ওরা পারে ডিঙোতে?
পারে তো!
তারপর আনন্দ…
হ্যাঁ …আসে তো বুড়ি!
বাবা…তুমি কতো ভাল! আমার বুকের ভেতর ব্যাথা করছিল। ওটা তুমি বার করে নিলে!হি হি… এই দেখ, আমারও আনন্দ আসছে।
বাবা স্কুটিতে বসে মেয়ের মাথার চুল মোছে। চলো, এবার আমরা বাড়িতে যাই। কাল আবার নদীতে আসবো। তবে কাল আরো ভাল পারফর্ম করতে হবে কিন্তু।
মেয়ে ঘার নাড়ে। এখন  গঙ্গা নদীটা,  খুশির নদী হয়ে তার ছোট্ট বুকের ভেতর  ঢেউ ভাঙছে। আর সে পক্ষীরাজে উড়ে চলেছে, উড়ে চলেছে…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।