• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় মানিক বৈরাগী 

বিড়ম্বনা

কাকনকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে, তার কখন ডাক পড়ে জানি না। সে অধীর হয়ে  অপেক্ষা করছে। আমার কাছে অপেক্ষা চরম বিরক্তিকর। তেষ্টা পেয়েছে চা-সিগারেটের। কাকনকে বললাম, তোমার নাম ডাকলে যেও, তোমাকে চেনে। আমি নিচ থেকে আসি।
ক্লিনিকের নিচে পান বিড়ি চা’র টং-দোকানের সামনে দাঁড়াই। চা শেষে বিড়ি ধরাই। মাথার ভেতর খেলা করছে ডাক্তার যেসব টেস্ট দিবে সেসবের বিল নিয়ে, এরপর প্রেসক্রিপশনে লেখা ঔষধের টাকা নিয়ে। এদিকে ডাক্তারের চেম্বারে লম্বা লাইন। অপেক্ষা ভালো লাগে না, ছুড়ে ফেলি ক’টান মেরে।

ক্লিনিকের উপরে উঠে রোগীদের জন্য পাতা আসনের ফাকা জায়গায় গিয়ে বসে ঝিমুচ্ছি আর ভাবছি, ডাক্তার ফি পরিচিত বলে ফ্রি কিন্তু টেস্টের বিল কোথা থেকে জোগাড় করবো ।
এমন সময় একজন সালাম দিয়ে বললো, ভাই, কেমন আছেন?
ঝিমুনির বিরক্তিতে বললাম, আপনি কেমন আছেন?
এই উলটা প্রশ্নে সে রাজ্যের বিরক্তি ঝাড়া শুরু করলেন। আমি অসহায় শ্রোতা হিসাবে শুনে শুনে ক্লান্ত। অনেকক্ষণ পর সে থামল।এরপর সে আবার বললো, ভাই আপনি আমাকে চিনেছেন?
বললাম, পরিচয় দিলে খুশি হবো
এতে সে বিরক্ত হয়ে বললো, ভাই চিনলেন না, অ আপনারা নেতা মানুষ, আমাদের চিনবেন কী করে?
এখন আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, অনেক দিন আপনার সাথে যোগাযোগ না থাকায় হয়তো ভুলে গেছি। দয়া করে আপনার পরিচয় টা দিন।
সে বললো, আপনি যখন চকরিয়া উপজেলার সভাপতি ছিলেন, তখন আমি চকরিয়া উপজেলার বন বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম।
—অ অ। এবার চিনেছি, তো  আগে পরিচয় দিবেন না।
—হা হা। না চিনেন কি না দেখলাম।
আমার মনে পড়ে সেই সময় তার একটি নগন্য উপকার করেছিলাম। এখন সে অনেক বড় কর্তা। তার অনেক ক্ষমতা। পরিবার কক্সবাজারে শহরে থাকে, তাই পরিবারের টানে আসে কক্সবাজার। বদলির চাকুরি।
পরের প্রশ্ন—ভাই এমন হলেন কেমনে?
বললাম, বিগত জোট সরকারের ভালোবাসার অবদান।
আবার প্রশ্ন—এখন কিসে আছেন?
—কক্সবাজার শহরে আবাস
—কী করেন?
—কিছু করি না
—তো জীবন যাপন?
—আল্লাহর ওয়াস্তে চলে যায়। বউ একটি কে জি স্কুলে মাস্টারি করে সাথে টিউশনি করে।
—আপনি?
—কবিতা লেখার চেষ্টা করি বই পড়ি, আড্ডা মারি।
—নিজের বাড়ি, না ভাড়া বাসা?
—ভাড়া বাসা
—তো এ অল্প টাকায় কীভাবে চলে?
আবার বকবক—ভাই, আপনি দলের জন্য এত কিছু করলেন, দল আপনারে কি দিছে? ওরা এখন দামি দামি গাড়ি হাকায়, আপনি আর জয়নাল ভাইয়ের কিছু হলো না আর কি?
—কিছু হওয়া বলতে আপনি বোঝাচ্ছেন বুঝলাম না। শোনেন-চাহিদার সীমানা থাকলে আল্লাহ চালিয়ে নিয়ে যায়।
—আপনি ভাই কমিউনিস্ট টাইপের মানুষ
—তো কী হয়েছে
অফিসার আবার কথার দিক পাল্টালেন—আমি আপনার ফেইসবুকের ফলোয়ার।
—আচ্ছা
—আপনি গেলো মাসে ঢাকা ও রাজশাহী বেড়াতে গেছেন। এই দৌড়াদৌড়ির খরচ কই পান?
বললাম, যাদের প্রয়োজন তারা ডেকে নিয়ে যান, তারা খরচ বহন করেন।
—ভাই, বলবেন না তো! আমরা কিছু চাইব বলে? লুকান আর কি। আপনি তো প্রধানমন্ত্রীর লোক
আমি তাকে উল্টো প্রশ্ন করলাম, আপনি কার?
ওনি এবার চেহারার রং পাল্টালেন। আমি বললাম, দেশরত্ন শেখ হাসিনা ছাড়া  আমার কোন পথ খোলা নেই, আওয়ামীলীগ আমার রক্তে। তো আমার আর কোনো গন্তব্য নেই।
এরপর তার থেকে বিদায় নিতে চাচ্ছি, দোয়া করবেন। উঠি কাজ আছে। কিন্তু সে নাছোড় বান্দা। এমন সময়ে আরও একজন এসে জুটলো।
এক গাল হেসে বল্লো,ভাই কেমন আছেন?
বললাম, আপনি কেমন আছেন?
—কেমন থাকব ভাই?
—ওর জ্বালায় থাকতে পারছি না। কার জ্বালায়?
—আমার জন্য একটু লিখিয়েন ভাই।
বললাম, আপনারে এমপি মন্ত্রীদের সাথে ছবিতে হাস্য উজ্জ্বল দেখি, আবার জ্বালা কিসের? আমি অনুপ্রবেশক দের জন্য লিখিনা, বাঁশ দিই।
ভাই ভাই, আপনি যদি একটু আচাইচ্ছা বাঁশও দিতেন, এমপিকে গিয়ে বলতাম, লিডার আপনার পক্ষে কাজ করি বলে আজ আমাকে নিয়ে কথা বলে, বদনাম রটায়। রাজাকার তো আমার বাপ, আমি কি রাজাকার? আপনার সাথেই দিনরাত থাকি। তখন এমপি আমারে কোলে বসাইত
মনে মনে বলি, আজব ব্যাপার তো!
রাজাকার পুত্র বলে, আপনার ভাই কোনো সমস্যা নাই। আপনারে ম্যাডাম ও অমুক ভাই জানে চিনে। আমারে তো  চিনে না। ভাই ভাই।

এমন সময় চেম্বার থেকে কাকন এসে হাজির। একগাল হাস্যোজ্জল বিরক্তি নিয়ে বললো, ডাক্তার অনেক পরিক্ষ দিছে, আপনারে খুঁজছিল, কই ছিলে? খোঁজে পাওয়া যায় না? এক ঘন্টার জন্য ও স্থির থাকতে পারো না, সব সময় পার্টি করতে হয়?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।