কারচুপি
গ্রামের স্কুলের কেরানীগিরি প্রায় ছ’ বছর হয়ে গেল। প্রথম থেকেই কন্যাশ্রীর দায়িত্ব আমার কাঁধে। আজ টেবিল ঘেঁষে একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল।
“কী চাই?”
“ছার্, কন্যাছিরি।”
“বাবাকে এনেছিস? সই করতে হবে।”
“আব্বা নেই, ছার্।”
“ও মারা গ্যাছে!”
“না, ছার্, তিন বচর আগে খালারে নিই কুথায় চলে গেছে, আর আসিনি।”
“তা’লে মাকে নিয়ে আসবি।”
“আম্মাও নেই, ছার্।”
“নেই মানে?”
“আব্বা যায়ার পর গেরামের এক চাচার ঘরে চলি গেছে, আর আসে না। আমাদের সাতে কতাও বলে না।”
এই প্রথম মেয়েটার মুখের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালাম। একটা মেঘলা সকাল।
“তুই থাকিস কার কাছে?”
“নানার বাড়ি।”
“নানাকে নিয়ে আয়। নানা সই করলেও হবে।”
“নানা মরে গেছে।”
“নানি আছে?”
“আচে, কিন্তু আসতি পারবে না। খুব শরীল খারাপ। বিচানাত্তে উঠতি পারে না।”
“নানির নাম কী?”
“নূর নাহার বিবি।”
আমি মেয়েটির ফর্মে অভিভাবকের স্বাক্ষরের কলামে বাঁ-হাতে লেখার চেষ্টা করলাম– নূর নাহার বিবি।