জুন ১৯৩৪। সোভিয়েত গুপ্তচর বিভাগ OGPU-এর সহকারী চেয়ারম্যান ইয়াগোডার গোপন অফিস থেকে ডাক পড়েছে ডাক্তার কাজাকভের। গম্ভীর হয়ে বসে আছেন ইয়াগোড। কাজাকভ্ দুরুদুরু বুকে ঢুকলেন।
ইয়াগোডা— আপনি মেনঝিনস্কীকে দেখতে গিয়েছিলেন? তাকে সারিয়ে তুলেছেন?
কাজাকভ্— হ্যাঁ, আসলে বড় কষ্ট পাচ্ছিলেন।
— ডাক্তার লেভিনের সাথে আপনার কথা হয়েছ?
— হ্যাঁ।
গর্জে উঠলেন ইয়াগোডা— তাহলে কীসের জন্য আপনি দেরি করছেন? কেন অন্যের কাজের মধ্যে মাথা গলাচ্ছেন? মেনঝিনস্কী মরে গিয়েছে। আমার আদেশ লেভিন ও আপনি মিলে তাকে তাড়াতাড়ি শ্মশানের পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
মেনঝিনস্কী OGPU-এর সর্বময় কর্তা, চেয়ারম্যান।
১১ মে ১৯৩৪। কাগজে প্রকাশ— গতকাল হার্টফেল করে মারা গিয়েছেন গুপ্তচর বিভাগের প্রধান মেনঝিনস্কী।
OGPU-এর সর্বময় কর্তা হলেন ইয়াগোডা।
এ-বছরই নিউমনিয়ার মারা গেলেন ডাক্তার লেভিনের চিকিৎসাধীন নিরীহ পেশকভ, বিখ্যাত সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কির ছেলে।
১৮ জুন ১৯৩৬। বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে শুনলো রাশিয়ার সর্বশ্রেষ্ট লেখক, বিশ্বমানবতার অন্যতম প্রধান উপাসক ম্যাক্সিম গোর্কি নিউমনিয়ায় মারা গিয়েছেন। শ্রদ্ধায় বেদনায় গোর্কির কফিন কাঁধে নিয়ে কবরস্থানের পথে হেঁটছেন রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধান সয়ং স্ট্যালিন। এই মুহূর্তে তিনি কল্পনাও করতে পারছেন না এই আপত-নিরীহ শোক সংবাদের আড়ালে যে কত বড়ো জঘন্য পাপের ষড়যন্ত্র রয়েছে।
মার্চ ১৯৩৮। “মস্কো ট্রায়ালে” বিচার হয়েছে ইয়াগোডার। সকল অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। রাশিয়া থেকে নির্বাসিত ট্রটস্কী ইউরোপের নানা দেশে বসে স্ট্যালিন ও সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা থেকে ইংল্যান্ড, জার্মান থেকে জাপান—যে বিরাট ষড়যন্ত্র গড়ে তুলেছিলেন, তারই অঙ্গ হিসাবে শাসনব্যবস্থার সাথে থেকে দেশের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ও সবোতাজ করে চলেছিলেন ইয়াগোডা। মেনঝিনস্কীকে হত্যা করেছিলেন পদের লোভে, ষড়যন্ত্রকে আরও কণ্টকহীনভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ম্যাক্সিম গোর্কিকে হত্যা করেছিলেন কারণ স্ট্যালিনের উপর ততকালীন রাশিয়ার এই অসামরিক সাহিত্যিকের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। সবকাজে স্ট্যালিন পরামর্শ নিতেন গোর্কির। কিন্তু গোর্কির ছেলে পেশকভ? তার কী অপরাধ?
ইয়াগোডা নীরব। তারপর সে বিচারকের উদ্দেশ্যে বলল— হে মহামান্য, যদি গোপনে একথা প্রকাশ করতে দেওয়া হয়, আমি বলতে রাজী।
আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ডেভিস্ সেই গোপন জবানবন্দিটি প্রকাশ করে দিয়েছিলেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘মিশন টু মস্কো’-তে। পেশকভের অপরাধ, তার তরুণী স্ত্রী ছিল অপরূপ সুন্দরী।