• Uncategorized
  • 0

অণুগল্পে গৌতম বাড়ই

ফুঁ

শুধু একটা মাত্র ফুঁ আর তাতেই বাজিমাত।লোকের লম্বা লাইন সকাল থেকে রাত্রি।দূর দূরান্তের থেকে লোক ছুটছে  এই ফুঁয়ের মুখে।
বীরপাড়া আর ফালাকাটার মাঝে জটেশ্বর বলে একটা ছোট্ট গঞ্জ মতন জায়গা আর হাট আছে, সেখানে বাস থেকে নেমে ফালাকাটা মুখে বাঁদিকে কিলোমিটার দুয়েক হেঁটে গেলে যে গ্রামটি পড়বে সেখানে প্রতিদিন সকাল বিকেল লোকে লোকারণ্য।
ফটিকের হাঁপানির টানটা একটু বেড়েছে এবারে আরো।ফি বছর লাগাতার বেড়েই চলেছে।এবারে শীত পড়তে না পড়তেই এই নবীন ঠান্ডাতেও ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।আমায় এসে বললো–ভাই আমারে একটু ফুঁ বাবার কাছে নিয়া যাইবি।শুনছি তো ওর ফুঁয়ে হাঁপানি জবরদোস্ত সারে,বেমালুম হাপিস। তুই আমারে নিয়া চলনা ভাই।
এই হয়েছে আমার এক জ্বালা।এই আলতাবাড়ি গ্রামে কারো কিছু ঘটলেই হলো,সে জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি বা আর অন্য কোনো জায়গায় হোক- ডাক্তার দেখাতে হবে,ভাইটি চল না। মেয়ের বিয়ের পাত্র দেখতে যাবে,ভাইটি একবার চলো,তোমারই তো বোন।কি যে অগাধ ভরসা প্রত্যেকের আমার ওপর।
যেন গুষ্টি শুদ্ধ সব   ভাইবোন,  খুড়োজ্যাঠা,মামা,দাদা,দিদি নিয়ে আমি বসে আছি।কেন না ওদের সবার মধ্যে আমি একটু শুধু বেশী পড়াশোনা করেছি ।তাও দু-বছর হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশ দিয়ে বেকার।নাও সমাজসেবা করো।
ফটিকদা এই হাট ওই হাট ঘুরে  লটারী ফিরি করে বেড়ায়।তারও একা যেতে কেমন কেমন লাগছে। তাই আমায় নিয়ে যেতে চায় ঐ ফুঁ বাবার কাছে।
কোন সকালে বেড়িয়েছিলাম।বিকেল চারটে নাগাদ আমাদের ফুঁ বাবার কাছ থেকে ডাক এলো।দুজনেই ঢুকলাম ওর ঘরে।আমি হাত দিয়ে ইশারা করে ঘরে বসা একজন লোককে ফটিকদাকে দেখালাম। দেখলাম, একটা মস্ত তাকিয়া পেতে সাদা চাদর বালিশের সাথে ফটফটে দামী কাপড়ের সাদা ধুতি পড়ে ফুঁ বাবা বসে আছেন।চেহারাটা খাসা।গৌরবর্ণ,সারা শরীরে একটা জ্যোতি বা ঐ ঝকঝকে ভাবটাব আছে।বয়স ষাট -পঁয়ষট্টি হতে পারে আবার সত্তর -পঁচাত্তর।বেশ সুস্থ সবল শরীর।অনায়াসে দশ বারোটা বছর মেরে দেওয়া যায়।টেবিলে বসে থাকা লোকটি পঞ্চাশ টাকা নিলেন,একটা হরলিক্সের খালি বোতল তাতে জলভরা, হাতে দিয়ে ফুঁ বাবার কাছে এগিয়ে যেতে বললেন।বাবা ফটিকদার মুখে সব শুনে মাথাটা ধরে জোরে একটা শব্দ করে ফুঁ দিলেন আর গোটাকতক ফুঁ দিলেন ঐ জলভরা বোতলে। তিন লপ্তে তিনবেলা তিন চামচ করে জলপান বিধান আর সাতদিন পর আসতে  বললেন।
আবার এক সপ্তাহ পর চললাম জটেশ্বর।আমি ফটিকদাকে বললাম, তোমার ঐ ফুঁ টুতে আমার কোনো বিশ্বাস নেই। এবারেও যাচ্ছি,এর পরের বার অন্য কারুকে নিয়ে এসো অথবা একলা আসবে।ফটিকদা বললো,বলিস কি! অদ্ভুত কাজ করেছে ভাই।এ জল খাবার পর থেকে আমার হাঁপের টানই নেই।
আজ জটেশ্বরে নেমে দেখলাম গ্রাম অভিমুখে আগের মতন ভিড় যেন নেই।দুর থেকে লম্বা লাইন নজরে এলো না। ফুঁ বাবার ঘরের সামনে গুটিকতক লোক।আমরা জিগ্গেস করলাম,বাবা কি বাড়ি নেই?না আজকে কাউকে ফুঁ দেবেন না?
ঐ গুটিকতক লোক অবাক হয়ে আমাদের দেখলেন।তারপর বললেন,আপনাদের আজ আসবার কথা ছিলো?বললাম, হ্যাঁ,উনি তো আজ আসতে বলেছিলেন।
একজন মাথাটা কিছুটা নামিয়ে বললেন,বাবাজী গত পরশু দেহ রেখেছেন।
দেহ রেখেছেন মানে মারা গিয়েছেন?
হ্যাঁ। একজন জানালেন।
আমার মুখ দিয়ে হঠাৎ শুধু বেরিয়ে এলো,কেন ওনাকে ফুঁ দেওয়ার মতন কেউ ছিলেন না তখন এখানে?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।