অণুগল্পে অতনু রায়

হারাধনের অর্থনীতি

হারাধন ওরফে হারু লিটল ম্যাগাজিন করবে । সত্যদা’র চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে মাথায় আইডিয়াটা  এসেছে । হাতে টাকা পয়সা তেমন  বেশি নেই , কাজকর্মের অবস্থাও তথৈবচ । এখন ম্যাগাজিন করে বিজ্ঞাপন থেকে যদি কিছু মালকড়ি আসে তবে মন্দ হয়না । কথাটা মাথায় আসাতেই হারু ফোন করে তার ছোট বেলার বন্ধু তপন কে । হারু শুনেছিল তপন কবিতা লেখে । ম্যাগাজিন যখন তখন কিছু গল্প কবিতা তো লাগবেই ।ফোনে  তপন হারু কে জানিয়ে দেয় যে,  সে বিকেলে দেখা করবে । হারু চা খেয়ে  একটা বিড়ি ধরিয়ে ম্যাগাজিনের জন্য নাম ভাবতে শুরু করে । অনেক নাম মনে এলেও কোনটাকেও ঠিক মনে ধরলো না । পরে নাম ঠিক করবে মনস্থির করে হারু সত্যদা’র চায়ের দোকান থেকে উঠে বাজারের দিকে পা বাড়ায় । বাজারটা একটু ঘুরে দেখতে হবে ।
প্রথমেই সে গেল “ জয়গুরু ভান্ডার” এর মালিক হাবুল কাকার কাছে । গিয়ে বললো ‘ কাকা একটা ম্যাগাজিন করবো, বিজ্ঞাপন দিতে হবে । ‘ হাবুল কাকা চোখ কপালে তুলে বললে –
‘ম্যাগাজিন  সেটা আবার কী জিনিস ? আর বিজ্ঞাপনই বা দেবো কেন ? ‘
‘ আরে ম্যাগাজিন বোঝো না । ওইসব কবিতা গল্পের ছোট বই । তুমি বিজ্ঞাপন দিলে তোমার দোকানের নাম গ্রাম তো বটেই,  এমনকী বাইরের লোকেও জানবে । ‘
‘ শোন হেরো গাঁয়ের সবাই আমার দোকান চেনে । পয়সা দিয়ে নতুন করে চেনানোর কিছু নেই । আর বাইরে থেকে নতুন লোক আমার দোকানের জিনিস কিনতে আসবে না । তাই পথ দেখ , মেলা বাজে বকিসনা । ‘
উপায় না দেখে হারু গজগজ করতে করতে  বেরিয়ে এলো দোকান থেকে । এবার কোথায় যাবে ভাবতে ভাবতেই সে দেখল সামনের “ভোলেবাবা হার্ডওয়্যার “ এর মালিক বিকাশ দা একাই দোকানের কাউন্টার এ বসে  আছে । ওখানে একবার গেলে হয় । যেমন ভাবা তেমন কাজ । বিকাশ দার কাছে গিয়ে হারু হাত কচলাতে কচলাতে বলে – ‘ দাদা একটা ম্যাগাজিন করবো ভাবছি । তোমাদের সাহায্য দরকার ’ । বিকাশ একগাল হেসে বলে- ‘ ওরে এসব সাহিত্য টাহিত্য আমার হয় না । আমি আবার কী সাহায্য করবো ? ’
‘ বিজ্ঞাপন দেবে । আমাদের উৎসব দেবে ’ হারু জবাব দেয় । বিকাশ ‘ ও চাঁদা চাই । তাই বল । তা কত দিতে হবে ? শোন পঞ্চাশ টাকার বেশি কিন্তু দিতে পারব না । বাজার এখন খুব খারাপ । ঠিক আছে পরের সপ্তাহে এসে নিয়ে যাস ’ এই বলে ভেতরে ঢুকে গেল । হারু মনে মনে বিকাশ কে আচ্ছা করে গোটা কতক বাছা বাছা খিস্তি দিলো । বাজার এর চালু দুটো দোকানে যদি এই কথা বলে তবে তো ম্যাগাজিন করা চাপ হয়ে যাবে । কারণ “ শিবনাথ বস্ত্রালয় ” আর “ দিলখুশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ” ছাড়া এই মোড়ে আর কোনো বড় দোকান নেই । সব প্রায় ছোট ছোট গুমটি ।শিবনাথের মালিক হেবি কিপ্টে সবাই জানে । আর দিলখুশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার যদি বিজ্ঞাপন দিয়েও দেয় , শুধু ওর টাকা দিয়ে তো আর ম্যাগাজিন করা যাবে না । হারাধন ভাবে, থাক আর ম্যাগাজিন করে লাভ নেই । তার চেয়ে বরং এন্ট্রি ফি নিয়ে আটদলের শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট করলে হাতে কিছু থাকবে । ভাবার সাথে সাথে ফোন বের করে হারু । ওদের গ্রামের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন ভেকুকে ফোন করে । আজকেই একবার ভেকুর সাথে বসতে হবে । শুভ কাজ ফেলে রেখে তো লাভ নেই ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।