• Uncategorized
  • 0

গল্পে অরণ্যদেব

ভূত বাঁচান

আচ্ছা জানেন পৃথিবীতে ভূত কমে যাচ্ছে। সত্যি বলছি। যত পোড়ো বাড়ি, ভুষণ্ডির মাঠ সব প্রমোটাররা বাজেয়াপ্ত করছে তত ভূত কমছে। বিদেশেও হাইরাইজ এত বেড়ে গেছে যে ভূতেদের থাকার জায়গা কমে গেছে। ভূতেরা বরাবরই সর্বহারা। কিছুই নেই ওদের।মিনিমাম জামা কাপড় তো বাদ দিন, গায়ে মাংস অবধি নেই। মেটিরিয়ালিস্টিক মানুষরা মাংস অবধি দেয়নি। শুধু কটা হাড় দিয়েছে। কাউকে হাত দিয়েছে তো মাথা দেয়নি, কারো পাগুলোই উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। অথচ পৃথিবীতে মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভূতেদেরও জনসংখ্যা বাড়ছে। প্রায় সাতশো মিলিয়ন মত ভূত আছে পৃথিবীতে তাদেরও দেশ কাল জাতি সবই আছে কিন্তু আমরা মানতেই চাই না। আমরা তাদের অনুপ্রবেশকারী বলি। প্রত্যেকের বেঁচে থাকার জন্য মিনিমাম অধিকার যেমন খাদ্য বস্ত্র আর বাসস্থান দরকার। ভূতদের ক্ষেত্রে শুধু খাদ্য আর বাসস্থান দরকার। আমরা তাদের থাকার জায়গাও কেড়ে নিচ্ছি। পোড়ো বাড়িতে এক কালে একসাথে ৩০ টা করে ভূত থাকতো কিন্তু এখন বাড়িই নেই, থাকবে কোথায়। তারপর এত আলো, এত বৈদ্যুতিক আলো যে ভূতেদের দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। রাত দিন আলাদা ঠাওর করতে পারছে না তারা, না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভূতের আদমসুমারি করেও ভূত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভূত সংরক্ষন করা দরকার আমাদের। শুনেছি একবার আমেরিকায় একটা প্ল্যান করা হয়েছিল রাতে মিনিমাম আলো জ্বালানোর জন্য। তাতে পার্কে জঙ্গলে পোকা মাকড়দের স্বাভাবিক জীবনে সমস্যা হয়, তাই আলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। দেখা গেছে তাতে পোকা বেড়েছে বেশ কিছু পরিমানে। আমরা পোকা মাকড় নিয়ে ভাবছি অথচ মানুষের আমার আপনার আর এক ভাই ভূত নিয়ে ভাবছি না। আপনি বড়লোক হতেই পারেন তবে আপনিও একদিন ভূত হবেন তাই এখন থেকেই ভূতের কথা ভাবুন। এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী একদিন ভূত শূণ্য হবে । ভূত ধরার যন্ত্র নিয়েও ভূত খুঁজে পাবেন না। সব ভূত দেশ ছেড়ে অন্য কোন গ্রহে চলে গেলে আর সেখানে এন আর সি হলে তো আপনারা আর দায়িত্ব নেবেন না তাদের, একটা ডিটেনশন ক্যাম্প অবধি কেউ বানাননি তাদের শান্তিতে থাকার জন্য। অথচ দেখুন আজ অবধি শুনেছেন কোন ভূত চাক্কা জ্যাম, হরতাল ইত্যাদি কিছু করেছে? ভূত বড্ড শান্তি প্রিয় জীব। আপনারা চৌত্রিশ বছরে যত না বনধ করেছেন তার থেকে অনেক বেশি বনধ করার ক্ষমতা রাখে ভূতেরা। ওদের দলে মাও, স্টালিন , চারু বাবু, মার্কস গান্ধী সুভাষ সবাই আছে। অল ওয়ার্ল্ড কমিউনিস্ট পার্টি অফ ভূত ফেডারেশনের সভাপতিও এখনো জীবিত, মরে ভূত হবার কোন চান্স নেই, অলরেডি হয়ে গেছেন। কিন্তু এভাবে কতদিন ? ভূত বাঁচান। ভূতেদের থাকতে দিন। ঘর বাড়ি না হোক একটু শান্তিতে চলা ফেরা করার জন্য জায়গা, সময় দিন।
ভূত চতুর্দশীর দিন ভূতেদের ফেস্টিভ ডে। সেদিন ওদের মোচ্ছব। পেত্নীরা সেজেগুজে বেরোবে একটু হাত ধরাধরি করে ঘোরার জন্য । বাচ্চা ভূত গুলো জোনাকি ধরে বেলুন ফোলানোর মত করে ফুলিয়ে ওড়াবে। সেদিন ওদের বিরক্ত করবেন না একদম। সেদিন অতিরিক্ত বিদেশি টুনির আলো জ্বালাবেন না। মাটির প্রদীপ জ্বালান। ভূতেরা প্রদীপের আলো দারুন ভালোবাসে। প্রচুর আলো জ্বালান কিন্তু প্রদীপের আলো। আপন ইলেকট্রিক বিল যা আসবে সেই দামেই প্রদীপ তেল সব হয়ে যাবে। দেখতেও বেশ ভালোলাগবে। আর ভূতেরা সে আলোতে রাতে যখন রাস্তা দিয়ে হই হই করে যাবে না, মাইরি বলছি ছোট বেলার ফুটবল শিল্ড জেতার মত আনন্দ পাবেন আপনিও।
প্রদীপ জ্বালান। ভূতেদের মৌলিক ধর্মীয় অধিকারে হাত দেবেন না। ওদের বাঁচতে দিন ।
প্রদীপের জন্য #PKD প্রোগ্রাম চলছে বাজারে। খোঁজ নিন। সস্তায় প্রদীপ কিনুন আর ভূত বাঁচান।
ভূত চতুর্দশীর দিন ভূতেদের নিজের মত থাকতে দিন।
জয় ভূত ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।